২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

অনশনরত প্রেমিকাকে পিটুনি দিল প্রেমিকের আত্মীয়-স্বজনরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ১২ অক্টোবর ২০১৭

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনরত অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে পিটিয়েছে প্রেমিকের আত্মীয়-স্বজন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হামলার শিকার ওই প্রেমিকাকে এলাকাবাসীরা উদ্ধার করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের হেফাজতে দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের বিরাট গ্রামে মিঠু মল্লিকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, বিয়ের দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিরাট গ্রামের মান্নান মল্লিকের ছেলে মিঠু মল্লিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেন রাহিমা খাতুন লাকী নামে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই প্রেমিকা। এরপর বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মিঠুর দুলাভাই খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে আরও ১০-১২ জন সন্ত্রাসী লাকীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে মিঠুর আত্মীয়-স্বজন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি ও টানাহেঁচড়া করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে এলাকাবাসীরা লাকীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তারের বাড়িতে পৌঁছে দেন।

হামলায় আহত প্রেমিকা রাহিমা খাতুন লাকী বলেন, ১৫ বছর আগে বাকেরগঞ্জের দুধলমৌ গ্রামের ছোবাহান শিকদারের ছেলের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছর পর তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের কিছুদিন পর খলিল শিকদার সৌদি আরব গেলে মিঠুর সঙ্গে ৪ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মিঠু তাকে বিয়ের আশ্বাস দিলে গত ১০ জুলাই স্বামী খলিল শিকদারকে তালাক দেন লাকী। এরপর মঙ্গলবার থেকে তিনি বিয়ের দাবিতে মিঠুর বাড়িতে অনশন শুরু করলে প্রেমিক মিঠুর পরিবার ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। বুধবার বিকেলে মিঠুর দুলাভাই সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান, বাকেরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর নান্নু শরীফ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান ও যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান চন্নুসহ একদল সন্ত্রাসী তাকে মারধর করে টানাহেঁচড়া করে মিঠুদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

এ ঘটনায় মিঠুর দুলাভাই সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে অভিযুক্ত করে তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বে বিয়ের দাবিতে মিঠুর বাড়িতে এলে খলিলুর রহমান আগের স্বামীকে তালাকের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন। তালাকের কাগজপত্র নিয়ে মঙ্গলবার ফের মিঠুদের বাড়িতে এলে তিনি কথা না রেখে কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিঠু এলাকায় না থাকায় বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে হামলার বিষয় অস্বীকার করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান চন্নু বলেন, ওই মেয়েটির বাড়ি বাকেরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডে। মেয়েটির পরিবার স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করায় পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোখলেছুর রহমান ও কাউন্সিলর নান্নু শরীফের সঙ্গে ঘটনাটি জানতে সিদ্ধকাঠিতে গিয়েছিলাম।

সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার বলেন, একটি গ্রুপ ওই মেয়েটিকে টানাহেঁচড়া করে তুলে নিতে চাইলে স্থানীয়রা তাতে বাঁধা দেয়। তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে আমার বাসায় নিয়ে এসেছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সুলতান মাহমুদ বলেন, মেয়েটির অনশন শুরুর পর প্রাথমিকভাবে থানার একজন এসআই ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য নিয়ে এসেছেন। হামলার ঘটনায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন