২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন বরিশালের বাইতুল আমান

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৯ অপরাহ্ণ, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বরিশাল-বানারীপাড়া সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে উজিরপুর উপজেলা। যা বরিশাল মহানগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। সড়কের পাশে গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মসজিদ। ১৪ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন বাইতুল আমান জামে মসজিদ ও কমপ্লেক্স। স্থানীয়দের কাছে এটি গুটিয়া মসজিদ হিসেবে পরিচিত। সৌন্দর্য ও এর বিশালতায় এটিকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জামে মসজিদ।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ১৪ একর জমির ওপর প্রথম ২০০৩ সালে মসজিদটির স্থাপনার কাজ শুরু হয়। প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০০৬ সালে এটির কাজ শেষ হয়। সে বছরই সর্ব সাধারণের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। মসজিদটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নমানের কাঁচ, ফ্রেম, বোস স্পিকার। যেটির কারনে এই মসজিদের আজান বিশেষভাবে শ্রুতিমধুর হয়েছে।এছাড়া মসজিদটির সীমানার মধ্যে ঈদগাহ্ ময়দান, দিঘি, এতিমখানা, ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, লেক, পুকুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। এই মসজিদটির তত্ত্বাবধানে ৩০ জন কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যাবস্থা রয়েছে মসজিদটিতে।’

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু। চাংগুরিয়ার নিজবাড়ির সামনে ব্যক্তিগত খরচে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে মসজিদটির স্থাপনার কাজ শুরু হয়। প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মসজিদের কাজ সম্পন্ন হয়।

২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এ মসজিদটির উদ্বোধন করেন ছারছিনা দরবার শরীফের পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ। এরপর থেকে প্রতিদিনই হাজারো দর্শণার্থী মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ পড়তে আসেন।মসজিদ কমপ্লেক্সের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে এখানে জমজম কূপের পানিসহ কাবা শরীফ, আরাফার ময়দান, জাবালে নৃর, জাবালে রহমত, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়ার কবরস্থান, খলিফাদের কবরস্থান, মসজিদে রহমত সহ বিখ্যাত মসজিদ ও বিখ্যাত জায়গা সমূহের মাটি সংরক্ষণ করা আছে। যা পর্যটকদের জন্য একটা বিশেষ আকর্ষণ।

কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি বৃহৎ মসজিদ মিনার, ২০ হাজার অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, এতিমখানা, একটি ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিংব্যবস্থা, হেলিপ্যাড, লেক-পুকুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশ পথের ডানে বড় পুকুর। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুর পাড়ের রাস্তা পাকা করে দেয়া হয়েছে।

রয়েছে মোজাইক দিয়ে পুকুরের শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটের পাশে বাদাম গাছ। যার নিচে বসে বাতাসের শীতল ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন মুসল্লিরা। পুকুরের পশ্চিম দিকেই মসজিদ।

মসজিদটির তিন পাশে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম খাল। যা নিরাপত্তা বজায় রাখতে সহায়ক। মসজিদের সামনের পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যে পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা গেছে।বায়তুল আমান মসজিদ লাগোয়া মিনারটির উচ্চতা ১৯৩ফুট। ঘাটের ঠিক উল্টোদিকে মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দুটি ফোয়ারা। রাতে আলোর ঝলকানিতে ফোয়ারাগুলো আরো দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও কমপ্লেক্স।’

ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের নামকরা মসজিদগুলোর নকশার অনুকরণে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয় করে এটি নির্মাণ করা হয়। মাঝখানের কেন্দ্রীয় গম্বুজের চারপাশে বৃত্তাকারে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে পবিত্র আয়াতুল কুরসি। গোটা মসজিদের ভেতরের চারপাশজুড়ে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে সুরা আর রহমান।ভেতরের চারকোনের চার গম্বুজের নিচে, প্রবেশ তোরণের সামনে এবং ভেতরের দর্শনীয় কয়েকটি স্পটে শোভা পাচ্ছে আল কুরআনের বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি। এসব সুদৃশ্য ক্যালিগ্রাফি এবং আলপনা করা হয়েছে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে। ভেতরের নয়টি গম্বুজে বিশালাকৃতির নয়টি অত্যাধুনিক ও মূল্যবান ঝাড়বাতি বসানো হয়েছে।

মসজিদটির মেঝেতে বসানো হয়েছে ভারত থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরের টাইলস। মসজিদটির ভেতরে এক হাজার ৪০০ মুসুল্লি একসঙ্গে নামায আদায় করতে পারেন। বাইরের অংশে আরো ৫ হাজার মুসল্লি একত্রে নামায পড়তে পারেন। মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যাবস্থা রয়েছে।’’

মুসুল্লিদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। মসজিদের উত্তরপাশে দুইতলা বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে কমপ্লেক্সের অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা। এছাড়া মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আড়াই একর জায়গায় রয়েছে কবরস্থান।

বিদ্যুৎ লাইনের পাশাপাশি রয়েছে ১৫০ থেকে ১৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দুটি জেনারেটর। যার আলোকসজ্জায় মসজিদটি রাতে অনেক বেশি নয়নাভিরাম মনে হয়। কারণ এর ভেতরে-বাইরে এমনভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা দর্শকদের নিয়ে যায় অপার্থিব জগতে।

অপরুপ সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন এই মসিজিদ কমপ্লেক্সটি ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে উঠেছে।”

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যদি কেউ আসনে। তাহলে বরিশালে সড়কপথে আপনি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বেশকিছু বাস বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেশীরভাগ বাস পাটুরিয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায়। আবার কিছু কিছু বাস মাওয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায়। ঢাকা থেকে আগত বাসগুলো বরিশালের নখুলাবাদ বাসস্ট্যান্ডে থামবে। রাজধানী থেকে বরিশালে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে আছে- শাকুরা পরিবহন, ঈগল পরিবহন ও হানিফ পরিবহন।”

কোথায় থাকবেন
মসজিদ কমপ্লেক্সের কাছাকাছি তেমন কোন থাকার ব্যবস্থা নেই। তবে বরিশালে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল রয়েছে।’ যেমন- হোটেল প্যারাডাইজ টু ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল।

সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে একই দিনে শুধু যে গুঠিয়া মসজিদ ঘুরতে যেতে পারবেন, তাই নয়, বরং দুর্গাসাগর ঘুরে আসতে পারবেন।

খাবার সুবিধা
ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছের জন্য বরিশালের খ্যাতি আছে। এছাড়া এখানকার খাবার হোটেলগুলোতে আপনি দেশী ও স্থানীয় খাবারও পেয়ে যাবেন।’

 

জাহিদ হাসান, অতিথি প্রতিবেদক

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন