১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

অলিতে-গলিতে মিলছে ইলিশ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:১১ অপরাহ্ণ, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন ইলিশসহ সব মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। চাঁদপুর প্রশাসনও প্রতিদিন নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের জেল-জরিমানা করছে। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ২৬টি অভিযান ও ৩৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ১১টি মামলায় এক জেলেকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল।

এতকিছুর পরও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রাতে ও ভোরে শত শত জেলে ইলিশ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশই নৌকা প্রতি ১/২ হাজার টাকা নিচ্ছে। যার জন্য পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার এ তথ্য অস্বীকার করেছেন।

এদিকে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত ২শ নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে নামছে। সেখানে ৪ জন পুলিশ নিয়ে আমরা মাত্র ১০ জন একটি নৌকায় অভিযান চালাতে পারি। হরিণা এলাকার অলিতে-গলিতে এখন শুধুই মা ইলিশ। জেলেরা মা ইলিশ ধরে নিজের পেটে নিজেই লাথি মারছে। একমাত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলেও জানান মৎস্য কর্মকর্তারা।

সরকার প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের পদ্মা-মেঘনার ৬টি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞাকে সফল করতে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চালও বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, চাল নিয়ে জেলেরা আবার ইলিশ ধরতে নদীতে নামছে।

চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতিরহাট পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকা অভায়শ্রমের আওতাভুক্ত। অথচ প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত শত শত জেলে নদীতে মা ইলিশ ধরছে।

বিশেষ করে চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার, ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রামদাসদী খাল, দোকানঘর গুচ্ছগ্রাম, মাদরাসা টাওয়ার, রণাগোয়াল, বহরিয়া, হরিণা, নন্দস খার খাল, গোবন্দিয়া রাঢ়ী বাড়ি এলাকা উল্লেখ্যযোগ্য। এসব এলাকার অলি-গলিতেও বসছে ইলিশের হাট।

এছাড়া মতলব উত্তরের ষাটনল, এখলাশপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ও নদীর ওপারে নিধন করা হচ্ছে মা ইলিশ। একই অবস্থা হাইমচরেও। যদিও প্রশাসন মা ইলিশ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির নেতা আব্দুল মালেক দেওয়ান বলেন, ‘এসব অভিযান দিয়া লাভ হইব না। আগে পুলিশকে ঠিক করেন। তারা যেভাবে টাকা নিয়া মাছ ধরতে সহযোগিতা করে, এতে নদীতে আর ইলিশই থাকব না।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি এ কথা মিটিংয়ে উঠিয়েছিলাম। সবাই আমারে না করছে। কিন্তু দেখেন এখন তাই হইতাছে।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন জেলেরা মা ইলিশ না ধরে। এ জন্য যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে।

কিন্তু তারপরও মা ইলিশ নিধনের দৃশ্য দেখলে চোখে পানি চলে আসবে। এটাই-বাস্তবতা। মা ইলিশ রক্ষা করতে হলে পুরো এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাহলেই মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার জামশের আলী জানান, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ডের যৌথ সমন্বয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নদীতে অভিযান ও মোবাইল কোর্ট চলছে। জেলে আটক করে জরিমানা ও কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন বিশাল এ নদী এলাকার সব জায়গায় প্রোটেক্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন