২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

আজ মধ্যরাতে বন্ধ হচ্ছে ‍ইলিশ শিকার, নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে জেল-জরিমানা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৬ অপরাহ্ণ, ০৬ অক্টোবর ২০১৮

প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় শনিবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন উপকূলীয় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও আশ্বিনের পূর্ণিমা লক্ষ্য রেখে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

মূলত আশ্বিন মাসের বড় পূর্ণিমার আগের চার দিন, পূর্ণিমার দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ উপকূলীয় এলাকায় ডিম ছাড়তে আসে।

এসময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করবে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌ বাহিনী, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি ও বিজিবি। এ আইন আমান্য করলে ১ বছর থেকে ২ বছরের জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

ইলিশ সারা বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ে। তবে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরের দিনগুলোকে মূল প্রজননকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে এখন আগের অমাবশ্যা থেকেই মূল পূর্ণিমার পরের ৪ দিন পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে দেশের উপকূলীয় ৩৭টি জেলায় বিশেষ নজরদারী চালানো হবে।

এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহাতায় মৎস্য অধিদপ্তর উপকূলীয় এলাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারী আড়ৎ, ইলিশ মোকাম ও বাজারগুলোতেও নজরদারী চালাবে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে দুই লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থ বছরের আহরণ ৫ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন থেকে চলতি অর্থবছরে সোয়া ৫ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে আশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তর।

প্রতিবছরই আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ উপকূলভাগে ছুটে এসে ডিম ছেড়ে আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যায়। উপকূলের প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে মৎস্য বিজ্ঞানীগণ মূল প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

নিষেধাজ্ঞা আরোপিত প্রজনন ক্ষেত্রগুলো হলো- উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গণ্ডমারা পয়েন্ট, উত্তর-পশ্চিমে ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন-সৈয়দ আশুলিয়া পয়েন্ট এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী পয়েন্টে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ জলসীমার জেলাগুলো হলো- চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও গোপালগঞ্জ।

তবে মৎস্য বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী ইলিশের মূল উৎপাদন কেন্দ্র হলো- চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলা সংলগ্ন নদ-নদীগুলো। ইলিশের সবকটি অভয়াশ্রম এ জেলা সংলগ্ন নদীগুলেকে ঘিরে। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বরিশাল বিভাগ ও চাঁদপুর জেলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. ওয়াহিদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেসব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেসব এলাকায় এবার বাড়তি নজরদারি রাখা হবে।

মৎস্য আহরণে বিরত থাকা বেকার জেলেদের খাদ্য সংস্থানে বিশেষ ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

গতবছর দেশের উপকূলীয় ১১২টি উপজেলার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২টি পরিবারকে ২০ কেজি করে ৭ হাজার ৬৮৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা বহালকালে অধিকাংশ জেলে সময়মতো তা পায়নি।

এদিকে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জেলেসহ সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্য কোথাও থেকে বরফ আসতে না দেওয়া, নদী সংলগ্ন খাল থেকে নৌকা বের হতে না দেওয়া, মাছঘাট সংলগ্ন বাজারের নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ রাখা, নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরের মাছঘাটগুলো বন্ধ রাখা প্রভৃতি।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রজনন মৌসুমে ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন