২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঈদের ছুটিতে শেবাচিম হাসপাতালে ৪০ রোগীর মৃত্যু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৬ অপরাহ্ণ, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঈদের আগে ও পরের তিনদিনে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৪ শিশুসহ ৪০জন রোগী মারা গেছেন। এরমধ্যে ২৪ জন রোগী মারা গেছেন গত শনিবার ঈদের দিন। এছাড়া কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তিনদিনে ১৬৩ রোগী স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন। গুরুতর অবস্থায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে গেছেন ৬১জন।

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বরিশালটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অথচ ঈদের আগে বন্ধের সময় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সংকট তৈরি হবেনা বলে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা থাকলেও এমন বাস্তবতা অনেকে শঙ্কিত। বিশেষ করে ছুটি ছাড়াও অলিখিতভাবে ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীরা ছুটি কাটানোর ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও শেবাচিমের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম দাবি করছেন- কঠোর নজরদারীর কারণে হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার ৮ রোগী মারা গেছেন। ওই দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে গেছেন ৩২ রোগী। কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন ৬৯ জন। ওইদিন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬১ জন।

ঈদের দিন শনিবার ৯ শিশুসহ ২৪ জন রোগী মারা গেছেন। চিকিৎসাসেবায় তুষ্ট না হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন ১৩ রোগী। ওই দিন স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন ৬৩ জন। এছাড়া ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ১৩৯ রোগী। নতুন ভর্তি হয়েছিলেন ২০৭জন।

ঈদের পরের দিন অর্থাৎ রোববার মারা গেছেন ৮ রোগী। উন্নত চিকিৎসার আশায় অন্যত্র চলে গেছেন ১৬ জন। সন্তোষজনক চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরেছেন ৩১ জন।

হাসপাতালটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, জরুরি মেডিকেল অফিসার ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার মোট ১৩০ জন চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঈদের ছুটি নিয়েছিলেন মাত্র ১০জন। কিন্তু ছুটি ছাড়াও অলিখিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী বেশীরভাগ চিকিৎসক।

এমনকি জরুরি বিভাগে ১০ জন চিকিৎসকের স্থলে তিনদিনে দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক।

ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে- ২৫জন হিন্দুসহ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংখ্যা ১৭০ জন। তাদের মধ্যে বরিশালে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন অন্তত ৩০জন। ঈদের তিনদিনে অর্ধেকের বেশীর ভাগ ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মস্থলে ছিলেন অনুপস্থিত। নার্সদের উপস্থিতির হারও ছিল একই রকমের।

তাছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর একটি অংশ অনুপস্থিত থাকায় পুরো হাসপাতালে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে কেবিন থেকে শুরু করে সর্বত্র।

যে কারণে হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়ে বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষায় এমন পরিস্থিতি প্রতি বছরই ঈদ বা কোরবানীতে দেখা দিয়ে থাকে।

তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের বন্ধে হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স কর্মরত ছিলেন। এমনকি তিনি নিজে প্রতিটি বিষয় কঠোরভাবে নজরদারীতে রেখেছিলেন।

ঈদের দিন ২৪ জন রোগীর মারা যাওয়ার বিষয়ে পরিচালক বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। বিশেষ করে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণের পর শিশু মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক। এছাড়া অতিরিক্ত এ্যাজমা, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বেশ কয়েকজন রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার পরেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

তাছাড়া যেসব ডাক্তার বা কর্মচারী ছুটি না পেয়েও কাটিয়েছে তাদের সম্পর্কে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পরিচালক।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন