২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের নামে কোটি টাকার বালু বাণিজ্য!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

ভোলায় ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের নামে বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের নামে রমরমা বালু বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেখানে নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ড্রেজিং করার কথা সেখানে ডেজিং না করে তারা অন্য যায়গা থেকে বালু কেটে বালু বিক্রির বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

শেলটেক সিরামিক কোম্পানিকে তারা ২০ থেকে ২৫ একর জমিতে প্রায় ১০ ফুট উঁচু করে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু ও মাটি ভরাট করে দিচ্ছে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর ফলে ছোট এ নদীর কিনারায় দেখা দিবে এক মহাবিপর্যয়।

গত দু’মাস আগে এ নদীর অন্যান্য জায়গায় ড্রেজিংয়ের ফলে ভোলা সদরের ৩ নম্বর পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সদুরচর ও জাঙ্গালিয়া মৌজার তেতুলিয়া নদীর দুপাশে কয়েক হাজার বাড়ি ঘর নদীরগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এরই মধ্যে অনেকে ভিটে মাটি ছাড়া হয়ে গিয়েছেন। তবে এখানে বালুর টাকায় পকেট ভারি হচ্ছে কিছু অসাধু বিআইডব্লিউটিসির কমকর্তা ও কর্মচারীর।

মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শেলটেক সিরামিক কোম্পানি এ কাজটি করাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সরকারের তৈল খরচ করে নিজেদের পকেটে যা পাওয়া যায় তাই তাদের লাভ মনে করেছেন। তাই এখন ব্যক্তি স্বার্থই তাদের কাছে মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এলাকার সাধারণ মানুষের কোনো কথায় কর্ণপাত করছেন না তারা।

এদিকে এলাকাবাসী অনেকবার এর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন এবং তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। কখনো আবার এলাকাবাসীর ছবি মোবাইলে তুলে রাখেন তারা। বলে বেড়াচ্ছেন ছবি তুলে রাখলাম এবার দেখে নিবো।

বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে এবার ফুঁসে উঠেছেন কয়েক হাজার এলাকাবাসী। অপরদিকে এ বিষয়ে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবগত করা হবে এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানান এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি এ নদী খুবই শান্ত ও নীরব ছিল। দশ বছরেও দুই হাত ভাঙেনি। ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-ঢাকা রুটের ছোট বড় অনেক লঞ্চ এ রুট দিয়ে যথারীতি যাতায়াত করে। তাদের কোনো সমস্যা হয় না চলাচলে। ছয় মাস আগে একবার এস এ ড্রেজার শেলটেক নামে একটি সিরামিক ফেক্টরিকে বালু দিয়েছে। তারপর থেকেই আমাদের নদী ভাঙতে শুরু করেছে। বাগেরহাটের পাশ থেকে বালু কেটে কেটে মানুষের কাছে বিক্রি করে এখন আমাদের এ হাক্কাঘাটা শেলটেক ফেক্টরি এলাকায় এসেছে। এখানে বালু কাটার কথা না থাকলেও তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ বালু দিচ্ছেন শেলটেককে এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তবে এ বিষয়ে শেলটেকের কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাথে কত টাকা, কত লক্ষ ফুট বালু দেওয়া হবে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে সে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা একটি কাগজে লিখে একটি স্বারক নং দিয়ে বলেন, নথি নং-১৮.০২.২৬.০০.২৯৪.০৭.০৫৯.১৪(খন্ড-০৩)/৯৮৩ এর চুক্তি অনুযায়ী আমরা বালু নিচ্ছি।

তবে সেখানে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এ জায়গা ভরাটের কথা থাকতে পারে। তাই যদি হয় তাহলে সরকারের কোটি টাকার তৈল গচ্ছা যাবে আর শেলটেকের লাভ হবে কয়েক কোটি টাকা। অনুসন্ধানের সময় বালু ভরাটকৃত এলাকা দেখতে গেলে সেখানে যাওয়া মাত্রই ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে এর ভিডিও ফুটেজ না নেওয়া যায়।

তবে একজন বালু ব্যবসায়ী জানান- এর আগে শেলটেক প্রায় ২৫ একর জমি বালু দ্বারা ভরাট করেছে। সে বালুগুলো বাইরের নদী থেকে জাহাজে করে এনে এখানে ফেলা হতো। এখন আবার শেলটেক আরো প্রায় ২৫ একর জমি ভরাট করছে। এর ফলে এক কোটি ফুট বালু লাগবে তাদের। এতো পরিমাণ বালু যদি এ এলাকা থেকে কাটা হয় তাহলে নদীর পাড়ের দুই হাজার ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- সাধারণত স্কুল, কলেজের মাঠ, মসজিদের মাঠ, রাস্তার দুপাশ ছাড়াও এলাকার কোনো মানুষের সমস্যা না হয় এমন জায়গা ভরাট করার কথা রয়েছে। যাদের বেশি পরিমাণ বালু প্রয়োজন তাদের প্রাইভেটভাবে খাস মহল থেকে বালু ভরতে হবে। কোনো অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করা যাবে না। আমার ধারণা ভোলার শেলটেক এড়িয়া থেকে ড্রেজিং অনেক আগেই করা হয়ে গিয়েছে। শেলটেককে এখন মাটি দেওয়া হচ্ছে কি না আমি জানি না। তবে বক্তব্য নেওয়ার দুঘণ্টা পর আবার ফোনে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধির কাছে নিজের সুর পাল্টে ফেলেন এ কর্মকর্তা।

এদিকে ভোলাতে কর্মরত বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা বলেন- আমরা কোনো টাকা নেই না শেলটেককে বালু দিয়ে। শেলটেক বলছে আমরা চুক্তি ভিত্তিক টাকা দিয়ে বালু নেই, তবে তা কত প্রকাশ করেননি। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একবার বলছেন আমরা শেলটেক থেকে কোনো টাকা নেই না। আবার বলছেন চুক্তি ভিত্তিক কিছু রাজস্বের বিনিময়ে বালু দেই।

এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন- ড্রেজিংয়ের যে বালুগুলো ফেলা হবে তা সম্পূর্ণ ফ্রি। কয়েক মাস আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় পরিদর্শনে এসে একথা বলে গিয়েছেন। কোনো টাকা ছাড়া স্কুল কলেজের মাঠ, হাট বাজার, রাস্তার দুপাশ ও চাহিদা মতো মানুষকে বালু দিতে হবে।

শেলটেককে যে নদী কেটে বালু দেওয়া হচ্ছে তা আমার অবগত নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেলে তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন