২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

গভীর রাতে বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে সাবেক চেয়ারম্যানের হানা !

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৫৮ অপরাহ্ণ, ১২ অক্টোবর ২০১৭

বিয়ের দাবিতে অনশনকারী প্রেমিকাকে মধ্যরাতে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ফিল্মি স্টাইলে নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রেমিকের বাড়ি থেকে তার আত্মীয়-স্বজনরা পিটিয়ে বের করে দিলে অন্তঃসত্ত্বা ওই প্রেমিকা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তারের হেফাজতে ছিলেন। সেখান থেকে সাবেক চেয়ারম্যানের নুরুল আলম গিয়াস মাঝির লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। বুধবার রাত ২টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, বিয়ের দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের বিরাট গ্রামের মান্নান মল্লিকের ছেলে মিঠু মল্লিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেন রাহিমা খাতুন লাকী নামে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই প্রেমিকা। বুধবার বিকেলে মিঠুর আত্মীয়-স্বজন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি ও টানাহেঁচড়া করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে এলাকাবাসীরা লাকীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তারের বাড়িতে পৌঁছে দেন। এরপর রাত আনুমানিক ২টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম গিয়াস, মিঠুর দুলাভাই সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান, স্বপন খন্দকার, যুবলীগ নেতা ফুয়াদ কাজী, দপদপিয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জহিরুল রিমনসহ আরো ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ফিল্মি স্টাইলে স্থানীয় চৌকিদার ও কেয়ারটেকার ভয়ভীতি দেখিয়ে চেয়ারম্যানের জেসমিন আক্তারের হেফাজতে থাকা ওই প্রেমিকা তুলে নিয়ে যায়।

এসময় গিয়াস মাঝি ওই এলাকার মিন্টু মেম্বারকে ফোনে বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রেমিক মিঠুর পরিবারের সঙ্গে মোট অঙ্কের টাকার চুক্তিতে গিয়াস মাঝি ও বিএনপি নেতা রিমন অনশনরত প্রেমিকাকে গ্রাম থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম গিয়াসের বিরুদ্ধে হত্যা, নাশকতা, সরকারি চাল চুরিসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। একাধিক মামলায় তিনি জেল খেটেছেন। অপরদিকে দপদপিয়া ভরতকাঠি গ্রামের মৃত শাহাজান আকনের ছেলে বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম রিমন গত ২০১৩ সালে বরিশালে মোটরসাইকেল চুরি ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন। ওই সময় তার বাসা থেকে ৩টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

অনশনকারী প্রেমিকা রাহিমা খাতুন লাকী বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস মাঝি ও জহিরুল ইসলাম রিমন ওই দিন মধ্যরাতে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে চেয়ারম্যানের বাসা থেকে নিয়ে এসেছেন। গিয়াস মাঝি আপতত চলার জন্য তাকে (লাকী) হাতখরচ বাবদ ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। রোববার বিকেলে দপদপিয়া ইউনিয়নে এ ব্যাপারে একটি সালিশ বৈঠক বসার কথা রয়েছে।

এদিকে লাকীকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম গিয়াস বলেন, আমি অনশনের ঘটনা শুনেছি। কিন্তু ওই মেয়েটিকে তুলে আনা বা অন্য কোন ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।

এ ব্যাপারে সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার বলেন, আমি এলাকায় না থাকার সুযোগে রাতের আধারে একটি গ্রুপ আমার বাসা থেকে ওই মেয়েটিকে নিয়ে গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি এলাকায় ফিরে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিব। নলছিটি থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল হালিম তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন