২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঘন বাইষ্যার খানালোর ব্যাঙের মত জাইক্কর দিয়া কথা কয়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৭ অপরাহ্ণ, ২২ অক্টোবর ২০১৬

কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। মৃত্যুর আগে। জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশ থেকে কলকাতা গিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগেই। তবে জীবনানন্দ দাশ কলকাতা গিয়েছিলেন সাহিত্যিক-রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে। এ যেন অপুর বাবা হরিহর রায়। বাঙাল দেশের ভিটেমাটি বিক্রি করে চোখে ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে কোনো এক পূর্ব-পুরুষের প্রবাস যাত্রা। ব্যর্থ মনোরথ হলেও ফিরে না আসা। কেননা পিছুটান থাকলেও পেছন ফেরার সকল দ্বার রুদ্ধ তখন। জীবনানন্দ দাশও ভিটে বিক্রির মতোই চাকুরিতে পদত্যাগ করে, স্থায়ীভাবে সপরিবারে কলকাতা রওনা করেছিলেন। তখন ১৯৪৬ সাল। অর্থাৎ দেশবিভাগের ঠিক পূর্বমহূর্ত। কত মানুষ দেশ ছেড়েছিল দেশবিভাগের আগে পরে- সঠিক পরিসংখ্যান আছে কি কোথাও?
জীবনানন্দ দাশের বিপুল পরিমাণ গদ্য রচনার জমিন প্রস্তুত হয়েছিল এই শেকড়-বিচ্ছিন্নতার প্রেক্ষাপটেই। কারুবাসনা, জীবনপ্রণালী ও প্রেতিনীর রূপকথা- তেত্রিশে রচিত এই তিনটি উপন্যাসের নায়কই কলকাতা যাত্রায় মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। (কিঞ্চিৎ দ্বন্দ্বরতও কি?)
দেশবিভাগ পরবর্তী পাঁচটি উপন্যাসের ভেতর চারটিতেই কলকাতা শহরের সদর্প উপস্থিতি (মাল্যবান, সুতীর্থ, বিভা ও জলপাইহাটি)। নায়কেরা সবাই সুশীল সমাজভুক্ত। সুতীর্থ-মাল্যবান বাদে প্রায় সকলেই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। ব্রাহ্ম সমাজের মাধ্যমেই উনিশ শতকের বাঙালি মধ্যবিত্তের ‘সুশীল সমাজ’ অবয়বটির অধিষ্ঠান। তেত্রিশের উপন্যাসে পূর্ববঙ্গে বসবাসকারী নায়কেরা হতাশাগ্রস্ত ঠিকই, বিষণ্ন আর অবসাদগ্রস্তও। কিন্তু নায়কের ব্রাহ্ম বাবারাও যেমন স্ফীতোদর পুঁজিপতিদের অবিরল নির্যাতন সহ্য করে চলেন, ছেলেও তেমনি। স্ত্রী পায়ে ধরে নিষ্কৃতি চাইলে বিছানা থেকে নেমে যান। বিনা অভিযোগে, বিনা তিরস্কারে। (দিনলিপি দ্র : ১৬.১২.৩৩: 16.12.33: Our marriage is scrap…সারাদিন কাঁদে… আমায় ধুলোয় মিশিয়ে দেয়… মুক্তি চায়… উঠে পড়ি, কি করব? আত্মহত্যা? হার্টফেল? শীতের রাতে অন্ধকার পুকুরে ডুবে মরব?) হয়তো তখনো কবি চূড়ান্তভাবে জীবনের ‘রাঙা কামনার’ রূপে বিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু চল্লিশের পরের রচনাগুলোতে শেকড়-বিচ্ছিন্ন কবির মনোভাব, প্রকাশের ভাষা বদলে যেতে থাকে। ততোদিনে বিশ্বাসের অবয়বে ফাটল ধরে গেছে। কেবল খলনায়কই (বিরূপাক্ষ) নয়, নায়কেরাও (মাল্যবান) অর্থের প্রলোভনে স্ত্রী-র সঙ্গ লাভে চেষ্টারত। না-পেলে স্বামীর চোখে স্ত্রী-র ‘সজারুর ধাষ্টামো, কাকাতুয়ার নষ্টামি, ভোঁদড়ের কাতরতা, বেড়ালের ভেংচি, কেউটের ছোবল, আর বাঘিনীর থাবা’ জাতীয় আচরণ ধরা পড়ে। (পৃ : ৩১/মাল্যবান) যদিও জানেন ‘সে-থাবার সামনে হরিণ বা বনগরু না হয়ে রায়বাঘের মত রুখে দাঁড়ালে ময়ূরীর মত উড়ে যায় ডাল থেকে ডালে অদৃশ্যলোকের ঘরপাতার ভেতর কোন এক জাদুর জঙ্গল এই মেয়েটি; না হলে ময়নার মত পায়ের কাছে মরে পড়ে থাকে- হলুদ ঠ্যাং দুটো আকাশের দিকে’।(ঐ)
নায়িকারাও কম যান না। ‘মাল্যবান’ উপন্যাসে নায়কের স্ত্রী উৎপলা ১১৩ পৃষ্ঠার উপন্যাসে দেড় শতাধিক ‘অপভাষা’ (Slang) ব্যবহার করেছেন তার সংলাপ প্রক্ষেপণে। সামান্য কিছু উদাহরণে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-
১. ভ্যাক ভ্যাক করে উগরে ফেলা (পৃ: ১৩)
২. সোমত্থ মাগি (পৃ: ১১)
৩. গুষ্টির খাঁই দমকে-দমকে চাড় দিয়ে উঠেছে (পৃ: ২৫)
৪. ন্যাং-ন্যাং করে হঁটো (পৃ: ৩৮)
৫. ন্যাকড়া ফুরানো (পৃ: ৪৩)
৬. মাগিদের কোলে করে বসা (পৃ: ৪৪)
৭. গায়ে গায়ে ঠাসাঠাসা মাছ পাতরি (পৃ: ১৮)
৮. ছেনাল (পৃ: ৪২)
৯. হাতির শুঁড় ব্যাঙের লেজ (পৃ: ৪৩)
১০. বেশ্যার ছেলের অন্নপ্রাশন (পৃ: ৩৯)

উপন্যাসে অবশ্য বিস্ময়করভাবে ১১০ পৃষ্ঠার পর থেকে পরকীয়া-পরপুরুষ অমরেশের আগমনে উৎপলার এই কর্কশ-রূপের আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে। খরভাষী-দন্তপেষণকারী নারীটি স্মিতহাস্যে-মৃদুভাষ্যে রহস্যময়তায় উপস্থাপিত হয়। অর্থাৎ ভাষা নিরপেক্ষ তো নয় কখনোই; এখানে দাম্পত্য-অপ্রেমের স্মারকচিহ্ন হয়ে বিরাজমান।
দুই
শ্রেণিবদ্ধ ভাষার স্বরূপ সার্থকভাবে উন্মোচন করেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ ছোটগল্পে ভিক্ষুক শ্রেণির নর-নারীর প্রণয়ালাপ প্রসঙ্গে লেখকের উক্তি- ‘উবু হইয়া বসিয়া পাঁচীর সঙ্গে সে আলাপ করে। ওদের স্তরে নামিয়া না গেলে সে আলাপকে কেহ আলাপ বলিয়া চিনিতে পারিবে না। মনে হইবে পরস্পরকে তাহারা যেন গালি দিতেছে।’
‘মাল্যবান’ উপন্যাসে মেসের ঝি গয়মতী পুজা উপলক্ষ্যে বোর্ডিঙের বাবুদের জন্য পানোৎসবের আয়োজনে নাচে-গানে সবাইকে বিনোদিত করে। পাঠকও জেনে যায়, এই বিনোদন নির্মল নয়। অর্থের বিনিময়ে মেসের বাবুরা এবং ঠাকুর-চাকররা পর্যন্ত ঝি-কে মাতাল করে নিয়ে ভোগের উৎসবে মাতে। সংলাপ বিনিময়ের সময় ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় তাদের আদিম স্বর ও শব্দ প্রকাশ পায়।
১. অন্ন খাব না আজ আর, মেষ্টান্ন খাব। (পৃ: ৮৬/মাল্যবান)
২. তোমার তো একটা মেয়েমানুষের গতর, গয়া! ও চায় সেটাকে পাঁচখানা করে নিতে। (পৃ: ৮৭/ঐ)
৩. পরকাল ঝরঝরে করে রাঁড়ি তো হয়েছিস। কিন্তু, আমি চক্কোত্তি বামুন, মনে রাখিস, পয়সা-টয়সা পূর্ণর মত আমি দিতে পারব না। (পৃ: ৮৬/ঐ)
প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, বরিশাল-পর্বে কি তিনি এই শ্রেণিটির মুখোমুখি হননি? না কি ‘রাবীন্দ্রিক বিশুদ্ধতা’য় তাদের ‘আলাপকে আলাপ বলিয়া চিনিতে’ চাহেন নাই? শ্রেণিভিত্তিক ভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে যদি ‘শুদ্ধতাবাদী’র নেতিবাচক তকমা দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে, মানিক বা জীবনানন্দ দাশেরাও কিন্তু স্তর বিভাজন করেন। অতঃপর নিজেদের মধ্যবিত্তিক স্তর হইতে ‘উহাদের স্তরে’ নামিয়া উহাদের আলাপকে চিনিতে চাহেন। ফলস্বরুপ এই দেখা আর চেনা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাই দেখা যায় কুবেরের শ্রেণিসংগ্রামকে ছাপিয়ে কপিলাকে কেন্দ্র করে মানস-সংকটে ঘুরপাক খেতে থাকা কুবেরের ব্যক্তি জীবনটাই উপন্যাসে প্রধান্য বিস্তার করে।

 
‘মাল্যবান’ উপন্যাসেও নায়ক মাল্যবান মেসের ঝি গয়মতীকে কেন্দ্র করে ভোগের উৎসবে দূরত্ব রক্ষা করে চলে; মধ্যবিত্তের সংস্কারবশত। কিন্তু তাতে ঘৃণার অবলেপন থেমে থাকে না অবচেতন শব্দের খেলায়। ‘… গয়মতী ঝি-কে নিয়ে সবাই ফূর্তি করছিল কিন্তু এই মাকড়ের ঠ্যাং, ফিঙ্গের ঠ্যাং, কাতলের মুখ, ভেটকির মুখের মত মেয়েমানুষটির মুখের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে ভারি দুঃখ হচ্ছিল মাল্যবানের।’ (পৃ: ৮৫)
অর্থাৎ ভাষা, শ্রেণিরও প্রতিনিধিত্ব করছে। কুবের-শশী, সুতীর্থ অথবা মাল্যবানেরা মানিক-জীবনানন্দ দাশের নায়ক, তারা লেখকদেরই প্রতিনিধিত্বকারী। মজদুর শ্রেণিভুক্ত যারা, যাদের বিশেষভাবে কোন নাম থাকে না, তারাও তাদের চিনে ফেলেছে।

 

‘সুতীর্থ অবিশ্যি গান্ধীধর্মী নয়- বিশেষ কোন বাঁধা ছক নেই তার, কেবলি জীবনটাকে বুঝে দেখতে চায় যে সুতীর্থ এই ধর্মঘটীরা তারই একটা উপলক্ষে দার্শনিকতায় বিজ্ঞতর হয়ে উঠলে বস্তুপুঞ্জের এসব অস্পষ্ট বিমূঢ়তাকে যে পায়ে পিষে চলে যাবে সে- হামিদ প্রভৃতি সামান্য মানুষও যেন সুতীর্থের এই চালাকি ধরে ফেলেছে। (পৃ: ১৬৯/ঐ) ওরা জানে সুতীর্থদের কাছে ওরা ‘বেচারি মানুষের ভিড়’ মাত্র। ‘পাড়াগাঁর বিশ্রি বিদঘুটে বর্ষার খালুয়ের ভিতর ল্যাটামাছের মতন’ তাদের এই যূথবদ্ধতা। হামিদ ঘনশ্যামরা জানে, সুতীর্থরা সচেতনভাবে শ্রেণিস্তর রক্ষা করে চলে, তারা  তাঁদের কাছে ‘কফের আঁশ-ফ্যাকড়া’ বিশেষ। শ্রেণিপরিচয়কে সামনে রেখেই যেন ব্যঙ্গাত্মক ভাষা বিনিময়ের সূত্রপাত ঘটেছে একাধিকবার। যখন সুতীর্থ মকবুলের বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ এড়াতে চায় দূরত্বের অজুহাতে তখন ধর্মঘটরত শ্রমিকদের ভেতর হাসির রোল পড়ে যায়।
‘আপনার মোটর শালিমার গিয়েছে।
সেখান থেকে শালিকে নিয়ে আসতে।
…     …     …     …
ভূষণ্ডির মাঠে কি খাচ্ছে মোটর?
মানুষ খাচ্ছে গোরু খাচ্ছে; আকাশ দিয়ে উড়ে যেতে যেতে যে পাখিগুলো হেগে যায় তাই দিয়ে পানচুন বানিয়ে খাচ্ছে আর কি।’ (পৃ: ১৫৮/সুতীর্থ)
সুতীর্থ উপন্যাসে শৈশবের বন্ধু নাপিত মধুমঙ্গলের কাছে চুল ছাঁটতে গিয়ে ঘোরগ্রস্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সুতীর্থর এলোমেলো মনোলগ আর মধুমঙ্গলের স্মৃতিকাতর ভাবনাকে ভেঙে দেয় সহকারী নাপিত বিপিনের ‘বাঙাল’ ভাষার বেসুরো রূপ। ‘ …তর লগে পাগলের লাহান কথা কইছে ক্যাডা? কথার লওন আছে থোওন নাই মানুষটা ক্যাডা? এই দুফুরইরডার সময় নি চুল ছাঁটে। চুল ছাঁটতে আইছে না চুলের আঁটি বাঁধতে- দলঘাসের আঁটি- ছলিমদ্দি সইসের লাহান? … কি করবি তুই আমার। রোজই তো ক্যাল্লা ছুটাস। তুই আমার বাপ কর্ণ, আমি হইলাম গিয়া রঞ্জাবতীর ছাওয়াল। আয় আয় দাতা কর্ণ আয়, করাত, দাও, কুড়াল যা হাতের কাছে পাস হেইয়া দিয়া দে গলা দু ফাঁক কইরা। বাইচ্যা থাইক্যা আর সুখ নাই।’ (পৃ: ২৯/সুতীর্থ)
শ্রেণি চরিত্রের ভিন্নতায় সৃষ্টি হয় ঘৃণার আর অবিশ্বাসের সংস্কৃতি। এম.ডি’র বিরুদ্ধে মজদুর শ্রেণির ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিচ্ছে এম.ডি’র অধীনস্থ মজদুরদের কর্মকর্তা সুতীর্থ। এরা প্রত্যেকেই পরস্পরকে ঘৃণা আর অবিশ্বাস উগরে দেয় তীর্যক ভাষায়।
-‘বড় রাম খাওয়াচ্ছে পাতিরামকে। চলবে না ওসব ছেঁদো বাকচাল সুতীর্থবাবু। … আছে কতগুলো চ্যাংড়া- মজুরের গায়ের গন্ধ শুকবে আর জিব চুক চুক করবে … শালা ওলাউঠো যতসব … এ মুখনাড়ার চেয়ে মেয়েদের নথ নাড়াও ভালো। (পৃ: ১৬১/সুতীর্থ)
‘সুতোর লালায় লেপটে রইছি ডিম
কি বলিল ভূপাল-’
‘তাইতো বংছ বিদ্ধি হল ওদের … (পৃ:১৬৫/ঐ)
মজদুর শ্রেণির ধর্মঘট প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতা হামিদ সম্পর্কে এম.ডি মুখার্জি সুতীর্থকে খিস্তি ঝাড়ে-
সিফিলিস হয়, ইনজেকশন নেয়। সেইজন্যই তো ওদের এত ধর্মঘটের ঘটা। বাজারের স্ত্রীলোকেদের ধর্মরক্ষা করছে ওরা, তাদের ধর্মপুত্র দিচ্ছে, সিফিলিসের ডাক্তারকে দিয়ে সে সব সারিয়ে নিয়ে ফ্যাকটরিতে এসে ধর্মঘট; ঘুরছে ধর্মচক্র। … মালিকের গলা টিপে ধর্মের নামে এই যে টাকা আদায় করে নেয়া, একেই বলে ধর্মঘট- (পৃ: ১৮২/সুতীর্থ)
সুতীর্থ অবশ্য কফের-আঁশ ফ্যাকড়াতুল্য এই শ্রেণির বলয় থেকে বের হয়ে আসে। আন্দোলনের প্রয়োজনে অর্থ যোগান দেয়া, হাজতবাস করা, অর্থের প্রলোভন এড়িয়ে যাবার মত আত্মত্যাগ করলেও খুনের মামলার ভয়ে ভীত হয়ে অবশেষে চাকরিই ছেড়ে দেয়। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্পর্কে লেখকের অন্যত্র অমোঘ উক্তি: অথচ বাঙালি মধ্যশ্রেণিরা অন্তত ভাত-কাপড় পেলে কেমন সুখে-শান্তিতে ঘর-কন্না করতে পারে তা দেখবার জিনিস।’ (পৃ: ১৯/মাল্যবান)
আর কেউ কি পেরেছেন মধ্যবিত্তের স্বকীয় অবয়বকে এভাবে দর্পনের মুখোমুখি করতে হাড়-মাংস-পুঁজ সমেত?
‘সুতীর্থ’ উপন্যাসে খল চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত বিরূপাক্ষ পূর্ববঙ্গে অভিবাসনকারী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। উনিশ শতকের ভূইফোঁড় সুযোগ-সন্ধানী, হঠাৎ-গজানো পুঁজিপতি। তিন পুরুষের কৃষিকাজের ঐতিহ্যের কারণে কাদা-মাটির গন্ধ যার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তখনো। যথার্থ ব্যবসায়ীও তাকে বলা যায় না। সব কিছুই সে টাকায় কেনে, কিনতে চায় এবং ক্রয়যোগ্য বলে মনে করে। শহুরে সৌজন্যের কৃত্রিম আঙরাখা তখনো তার গায়ে চড়েনি। ভাষায় বাঙাল টান কাটিয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু টাকার ওজনে কেনা দামি স্ত্রীর কাছে প্রায়ই আশ্রয়-না-পাওয়া বিরূপাক্ষের হাহাকার প্রায়শই প্রকাশিত হয়ে পড়ে বিশুদ্ধ বাঙাল ভাষার ব্যঙ্গাত্মক সুরে আর শেকড়-বিচ্ছিন্নতার গোপন আর্তনাদে।

 
১. তারপর যখন বুঝলে আামি, তখন তোমায় কোদার নাহান ভয় গোদার নাহান ঘেন্নায় গিয়ে দাড়াঁইল- হ্যা হ্যা হ্যা ঝয়োথি। (পৃ:৮১/সুতীর্থ)
২. এক্কেকবালে তাজ্জব মাইরা ভাবছিলাম যে আমিত্তির নাহান প্যাচেঁ প্যাচেঁ রস সেই জিনিসের হেইয়ার নাম ট্যাহা। (পৃ:৮২/ঐ)
৩. কালো বাজারের পঁচিশ লাখ ট্যাহা এমন ঘন বাইষ্যার খানালোর ব্যাঙের নহান জাইক্কর দিয়া কথা কয় ঝোয়থি। (পৃ:৮৭/ঐ)
ভাষা, এখানে অর্থনীতির মানদণ্ডে শ্রেণির সূচকরূপে নিরূপিত।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন