২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

চৌর্যবৃত্তিতে বিএম কলেজ অধ্যক্ষ হচ্ছেন সেই বিতর্কিত সচিন!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩১ অপরাহ্ণ, ২৯ জুলাই ২০১৭

নাম তার সচিন কুমার রায়, পেশায় শিক্ষক। তিনি বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ অধ্যক্ষ। ৭ম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। যোগদানের সময় সব কাগজপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সাল। কিন্তু ২৭ বছর পর হঠাৎ তার বয়স কমে গেছে ২ বছর। ২০১৪ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পর জন্ম তারিখ নিয়ে এই কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। পদোন্নতি পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ থেকে ২ বছর কমে হয়েছে ১ ফেব্র“য়ারি ১৯৬০ সাল। বিষয়টি জানাজানির পর তোলপাড় শুরু হলেও বহাল তবিয়তেই আছেন এ শিক্ষক। শুধু তাই নয়, এখন সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজেরও অধ্যক্ষ হতে চলছেন সচিন কুমার।

আগামী ৩০ জুলাই অবসরে যাচ্ছেন বিএম কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম। ওই পদে একাধিক প্রার্থী দৌঁড়ঝাপ করলেও সূত্র বলছে সচিন কুমারকেই শেষ পর্যন্ত বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর বিপ্লব ভাট্টাচার্য্য, বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ স্বপন কুমার পাল চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত সচিন কুমারকেই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সচিন কুমার রায় বলেন, চাকরিতে যোগদানের আগে বয়স পরিবর্তন করার আবেদন করেছেন। সেখানে ১৬ ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বোর্ডে জমা দেন। ওই কাগজপত্রের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বয়স কমিয়েছে। এটা নিয়ে নতুন বিতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বয়স কমানো যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সময় অফিস সহকারী ভুলে তার বয়স দুই বছর বেশি লেখেন। পরে আমার পিতা বিষয়টি সংশোধন করার উদ্যোগ নেন।

এমতাবস্থায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, তার বয়স আগে কমানো হলেও মন্ত্রণালয় তা সংশোধন করেছে সম্প্রতি। গত বছর অবসরে যাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের স্ত্রীর মাধ্যমে সচিন কুমার তার বয়স কমানোর ফাইলটি অনুমোদন করিয়ে দেন। এরপর থেকে এটি নিয়ে মন্ত্রণালয়, মাউশি এমনকি বরিশালের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে তোলপাড় শুরু হয়।

এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অভিযোগ উঠেছে ওই কমিটিতে যারা ছিলেন তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট জমা দেননি।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলিম বয়স কমানোর ব্যাপারে বলছেন, এটা তো অনেক আগের ঘটনা। ওই সময় যারা তার বয়স সংশোধিত করেছিল তারাই এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। যশোর বোর্ডের সচিব ড. মোল্লা আমির হোসেন বলেছেন, এটা নিয়ে বরিশালে অনেক কিছু হচ্ছে বলে শুনেছেন। বোর্ডের এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। তবে মন্ত্রণালয় বা আদালত যদি তদন্ত করতে বলে সেই মোতাবেক তদন্ত করবে শিক্ষাবোর্ড।’

শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি চাকরিতে এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জেনেও তিনি চাকরিতে যোগদানের পর বয়স কমিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি অতিরিক্ত আরও দুই বছর চাকরি করতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি যে প্রক্রিয়ায় বয়স কমিয়েছেন তাতে চাকুরিবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ প্রথমত এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বোর্ড একজন শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে ১৪ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে কেউ যদি বয়স কমানোর আবেদন করে সেখানে সর্বোচ্চ ১ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত কমানো হয়। এর বেশি হলে সব কাগজপত্র থাকার পরও বাতিল বলে ধরে নেয়া হয়। দ্বিতীয়ত ওই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন এবং চাকরিতে যোগদান করেন।

কিন্তু বয়স কমাতে এই দীর্ঘ সময় লাগার কথা নয়। তাছাড়া চাকরিতে এফিডেভিট শর্তজুড়ে দেয়া ছিল। তৃতীয়ত তার বয়স কমানোর পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, হিসাবরক্ষক (এজি) অফিসকে তা গ্রহণ করতে হবে। অথচ সেখানে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। সাধারণত এই ধরনের ঘটনা বা বয়স কমানো কখনো হিসাবরক্ষক অফিস গ্রহণ করে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।”

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন