২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

‘‘জয় সমাচার ও প্রাসঙ্গিক কিছু ভাবনা’’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:১০ অপরাহ্ণ, ০৩ মে ২০১৮

দশজন অসুস্থ মানুষের কর্মকান্ডে সমাজ ততটা কলুষিত হয় না, একজন সুস্থ মানুষের নীরবতায় সমাজে যতটা বিপর্যয় ঘটে। সুস্থ-সরল চিন্তার মানুষগুলো সব দেখেশুনেও যখন নিশ্চুপ থাকে, অন্যের সাথে অযথা শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ না করে অন্যায়ের সাথে মৌন আপোষ করে, ঠিক তখনই বিকারগ্রস্ত অসুস্থ চেতনার মতাদর্শগুলো সমাজে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ভেবেছিলাম- জয় বিতর্কে নিজেকে জড়াবো না। তবে শেষ পর্যন্ত বিবেকের দংশনে পরাস্ত হলাম। তাই আমার লেখায় যাদের স্বার্থে আঘাত লাগবে তাদের কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি।

শুরুতেই একটা বিষয় পাঠকদের কাছে পরিষ্কার করতে চাই এজন্য যে, বর্তমানের এই চরম স্বার্থান্ধতার যুগে মানুষ এখন স্বার্থ ছাড়া কাউকে সালাম দিতেও চায় না। সেখানে একটি বিতর্কিত বিষয়ে অযথা লেখালেখি করতে গেলে স্বার্থের প্রশ্ন চলে আসাই স্বাভাবিক। তবে পাঠকদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আল-নাহিয়ান খান জয় নামের তরুণ এই উদীয়মান ছেলেটির সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই। নেই কোনো সখ্যতাও। সে আমাকে চেনে কিনা জানিনা, তবে আলোচিত হওয়ার আগে তাকে আমি চিনতাম না। এটা হয়তো আমারই ব্যর্থতা যে, আমার ১৮ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের অধ্যায় থাকা সত্যেও ছাত্রলীগের মতো গৌরবোজ্জ্বল একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকীয় পদে থাকা বাবুগঞ্জের একজন কৃতি সন্তানের সাথে পূর্ব পরিচয় ঘটেনি।

তবে আমি জয়ের বাবাকে ও চাচাকে বেশ ভালোভাবেই চিনতাম। ছেলেটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। জয়ের চাচা আবদুল হালিম খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাবুগঞ্জের সাবেক আগরপুর (বর্তমান জাহাঙ্গীরনগর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। জয়ের বাবা আবদুল আলীম খান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে হুক্কা ও মাইক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি নির্বাচিত হতে না পারলেও পরবর্তীতে জয়ের আপন চাচাতো ভাই কামরুল আহসান হিমু খান দুইবার আগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওদের পারিবারিক অতীত ঐতিহ্যের ইতিহাস রয়েছে। খোঁজ নিয়ে যতদূর জেনেছি, পারিবারিক একটি শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার পরেও ছেলেটি ব্যাঙের ছাতার মতো রাতারাতি গজিয়ে ওঠা নেতা হয়নি। এজন্য তাকে যথেষ্ট সংগ্রাম আর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এলাকায় হয়তো অনেকে তাকে চেনে না ঠিকই, তবে দীর্ঘদিন রাজধানীর রাজপথ আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কাঁপানো এক সাহসী মুজিবসেনার নাম আল-নাহিয়ান খান জয়।

ব্যক্তিগত আগ্রহেই অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো জানতে পারলাম, ছেলেটি অসম্ভব মেধাবী এবং সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন লড়াকু একটি ছেলে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে সে তার দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। সাহসিকতা নিয়ে হরতাল প্রতিরোধ এবং পিকেটারদের ককটেল বোমাসহ ধরিয়ে দেওয়ায় ২০১৫ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে পুরস্কার লাভ করেছিল সে। সঙ্গেসঙ্গেই সেই পুরস্কারের অর্থ বার্ণ ইউনিটে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ অসহায় মানুষের চিকিৎসার্থে দান করেছিল মহৎপ্রাণ এই ছেলেটি। বাবুগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রাজধানীর মতো জায়গায় গিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। ঢাবি ক্যাম্পাসে সবার কাছে নিজের যোগ্যতার প্রমান দিয়েই আস্থা অর্জন করেছে সে। ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি গৌরবোজ্জ্বল সংগঠনের সদস্য পদ পেতেই যেখানে হিমসিম খেতে হয়, সেখানে সে আইন বিষয়ক সম্পাদকের পদ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন সে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদের দাবিদার হাতেগোনা কয়েকজন ছাত্রনেতার মধ্যে অন্যতম। এমনকি ঢাবি’র একটি নিরপেক্ষ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে ওই শীর্ষ পদের জন্য মাত্র দুইজন নেতার নাম সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে যতদূর জেনেছি, এদের মধ্যে আল-নাহিয়ান খান জয় নামটি রয়েছে। বিস্তারিত তথ্য আর মাঠের পারফরমেন্স বিবেচনা করে বাকি সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এটা আমাদের জন্য সীমাহীন গর্ব আর অহংকার করার মতো একটি বিষয় যে, আমার বাবুগঞ্জ উপজেলার একটি ছেলে আজ ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের শীর্ষ পদের দাবিদার। ঘুরেফিরে আলোচিত হচ্ছে তার নাম। এই গর্ব তার কিংবা তার পরিবাবের একার নয়, এই গর্ব সমগ্র বাবুগঞ্জবাসীর। এই গর্বের অংশীদার সমগ্র বরিশালবাসীও। যদি কারো মাঝে দেশাত্মবোধক চেতনা থাকে, তবে তিনি অবশ্যই গর্বিত হবেন বা হওয়া উচিৎ। ছেলেটি যদি আজ বিএনপির ছাত্রদলের শীর্ষ পদের দাবিদারও হতো তবুও মাটির টানে আঞ্চলিকতা স্বার্থে আমি নির্দ্বিধায় তাকেই সমর্থন করতাম। অথচ দারুণ আশ্চর্য হলাম এটা দেখে যে, আজ সেই বাবুগঞ্জের বাসিন্দা কিছু মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থ ও পারিবারিক অতীত রেষারেষির কারণে জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে! এটা অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনাদায়ক ঘটনা!

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক মাত্রায় দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিভিন্ন দলে ঢুকে পড়েছে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা আর দুর্বৃত্ত শ্রেণী। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে আজ তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। আওয়ামী লীগসহ দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলেই এই অভিন্ন অবস্থা বিরাজমান। আজ আগাছা গ্রাস করেছে বৃক্ষকে! পরজীবীর আক্রমনে পঁচে যাচ্ছে শরীর! জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না! সমাজে অযাচিত আগাছা-পরজীবীগুলো আজ অপ্রতিরোধ্য!

জয়ের চাচাতো ভাই বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুল আহসান হিমু খানের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আর বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা ও উপজেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়েও একদা পথভ্রষ্ট এক অন্ধকার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন জয়ের চাচাতো ভাই কামরুল আহসান হিমু খান। হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মরক্ষার্থে এবং কথিত সেই চরমপন্থি তকমার কালো দাগ দূর করতেই তিনি তৎকালে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পিতাও সেখানে চেয়ারম্যান ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সংগঠক একজন পিতার সন্তান হয়েও হিমু খানের বিএনপিতে যোগদান করার ঘটনা ছিল একটি ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এর সাথে তার চাচাতো ভাই আল-নাহিয়ান খান জয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। জয় কখনোই নিজ এলাকার রাজনীতির সাথে জড়ায়নি। পড়াশুনার সুবাদে সে রাজনীতি করেছে ঢাকায়। মেধাবী জয় বরিশাল জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় ঢাকা কমার্স কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাশের পরে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগে ভর্তি হয়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী জয় ঢাবি’র ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান লাভ করেছিল বলে জানা যায়। বর্তমানে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত।

আল-নাহিয়ান খান জয়ের আপন চাচাতো ভাই বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি,-এটা যেমন তার অযোগ্যতা প্রমাণ করে না; আবার ঠিক তেমনি জয়ের আপন চাচা বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠক ও সহ-সভাপতি,-এটাও তার যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। প্রত্যেকটি মানুষ তার নিজ কর্মদক্ষতা দিয়ে মূল্যায়িত হয়। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি রয়েছেন, যাদের আপন ভাই অন্য দল করেন। অনেক কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলার শীর্ষ পদধারী নেতা রয়েছেন যার আপন ভাই, বোন, সন্তান, পিতা কিংবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা। এমন সংস্কৃতি বাংলাদেশে বহুকাল ধরেই চলমান। তাই এটা একজন নেতার অযোগ্যতা প্রমাণের নিয়ামক নয়। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্ধ নন। তিনি যোগ্যতার মূল্যায়ন করেন সবার আগে। তাঁর চোখে উপযুক্ত মনে হলেই কেবল তিনি জয়কে ছাত্রলীগের চালকের আসনে বসাবেন। যে কোনো সংগঠনের চেয়ে তাঁর কাছে ছাত্রলীগ বেশি গুরুত্ববহন করে। রাজনীতিতে স্বতন্ত্র প্রাচীন সংগঠন হিসেবে একমাত্র ছাত্রলীগেরই রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে এই ঐতিহাসিক “বঙ্গবন্ধু” উপাধিটাও দিয়েছিল খোদ ছাত্রলীগ।

তাই আল-নাহিয়ান খান জয়ের বিরুদ্ধে আজ যারা অপপ্রচারে নেমেছেন তাদের করজোড়ে অনুরোধ করবো, দয়াকরে এসব বন্ধ করুন। দেশি একটা ছেলেকে উপরে উঠতে দিন। সবকিছুতে প্রতিহিংসা আর দলবাজি করবেন না। এসব বাদ দিয়ে আমাদের দেশি একটা মেধাবী ছেলেকে উপরে যেতে দিন। তার দক্ষতা বিকাশের সুযোগ করে দিন। দল-মত নির্বিশেষে ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে তাকে সমর্থন করুন। আমাদের এসব ফেসবুক অপপ্রচার আর মানহানিকর পোস্টে ছাত্রনেতা জয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ-পদবি নির্ধারিত হবে না। সরকারের বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই রিপোর্ট এবং রাজনীতিতে মাঠের পারফরমেন্স ছাড়াও সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দানুযায়ী ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদগুলো নির্ধারিত হবে। তাই সম্ভাবনাময় একটি দেশি ছেলের বিরুদ্ধে এসব কুরুচিপূর্ণ অর্থহীন অপপ্রচার করে নিজেদের আর দয়াকরে ছোট করবেন না। এতে বরং আপনাদের নিজেদের সংকীর্ণতা ও নোংরা মানসিকতাই প্রকাশ পাবে। ফলাফল আর কিছুই হবে না। অতএব, দল-মত-পথের বিভেদ ভুলে আসুন, আল-নাহিয়ান খান জয়কে নৈতিকতার জায়গা থেকে সকলে সমর্থন করি। সবাই ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে তার জন্য শুভ কামনা জানিয়ে সমস্বরে বলি,-

“আমাদের জয়ের জয় হোক”……

আরিফ আহমেদ মুন্না, সাংবাদিক

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন