১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝালকাঠিতে ধর্ষিতার পরিবারকে ডিবি পুলিশের মিমাংসার প্রস্তাব

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৯ অপরাহ্ণ, ০৯ মে ২০১৭

ঝালকাঠির বালিঘোনা গ্রামে শিশু গৃহকর্মী কাজলকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে বাদীকে আসামীদের সাথে আপোষ মিমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত কাজলের বাবা হিরন হাওলাদার সোমবার দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দায়ের করেন।

আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক অভিযোগ গ্রহণ করে আগামী ৬ জুন মামলার ধার্য্য তারিখ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানীর আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়- ঝালকাঠি সদর উপজেলার বালিঘোনা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল মান্নান বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার খাজুরবাড়ি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা চাতাল শ্রমিক হিরন হাওলাদারের মেয়ে কাজলকে (১২) প্রায় ছয় মাস পূর্বে পরিকল্পিতিভাবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে আব্দুল মান্নান ও তার ভাই আব্দুল গাফ্ফার। ধর্ষণ ও নির্যাতনের কারণে গুরুতর অসুস্থ  কাজলকে আবদুল মান্নানের স্ত্রী ও পুত্রবধূ মিলে ঘটনা কাউকে না বলার জন্য চাপ প্রয়োগ এবং গলাটিপে হত্যার চেষ্টা ও নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন।

কাজলের অবস্থা গুরুতর হলে আব্দুল মান্নান ও তার সহযোগিরা ০৮ মার্চ বিকালে বানারীপাড়া আবাসন প্রকল্পে কাজলদের বাড়ির সামনে কাজলকে ফেলে আসে।  কাজলের খালা ও নানী কাজলকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় বানারীপাড়া  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাজলের অবস্থার অবননতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাজলকে গত ০৯ মার্চ বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। শেবাচিমের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কাজলের বাবা ও সাংবাদিকদের জানায় ধর্ষণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শারীরিক নির্যাতনের কারনে কাজলের এই অবস্থা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ মার্চ ভোরে কাজল মারা যায়।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বানারীপাড়া খাজুরবাড়ি আবাসন প্রকল্পের কবরস্থানে কাজলের লাশ দাফন করা হয়।

গত ২৩ মার্চ নিহত কাজলের বাবা হিরন হাওলাদার ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় আব্দুল মান্নান ছাড়াও তার ছোট ভাই সোনালী ব্যাংক গুঠিয়া শাখার কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার, শ্যালক আনোয়ার হোসেন, স্ত্রী ফেরদেীসী বেগম, পুত্রবধূ শারমীন আক্তার ও গ্রাম্য ডাক্তার সনজয় কুমারকে আসামী করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের ওসিকে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ডিবির ওসি মো. কামরুজ্জামান, এসআই আমিনুল ইসলামকে মামলটির তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। এসআই আমিনুল কাজল হত্যার ঘটনাটিকে সঠিকভাবে তদন্ত না করে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। গত ২৭ এপ্রিল মামলার ধার্য্য তারিখে তিনি আদালতে প্রতিবেদন না দিয়ে ৩০ দিনের সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুরও করেন।

একই দিন মামলার বাদী হিরন হাওলাদার আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার সময় ডিবির ওসি মো. কামরুজ্জামান এবং এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হিরন, সাক্ষী একে আজাদ ও আমির হোসেনকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে নিয়ে ডিবি পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা বাদী হিরন এবং দুইজন সাক্ষীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান।

এক পর্যায়ে ডিবির ওসি এবং এসআই আমিনুল বাদী হিরনকে বলেন এ মামলা চালিয়ে লাভ নেই। সব মামলা প্রমান করা যায় না। তার চেয়ে আসামীদের সাথে মিটমাট হয়ে যা। আসামীদের বলে তোর জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেব।’
বাদী হিরন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন- ডিবির ওসি এবং এসআই আমিনুল আমাকে আপোষ হতে বলেছেন। যারা আপোষ হওয়ার কথা বলে তারা কোনদিন সঠিক তদন্ত করবে না।’ তাই আমি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তানের আবেদন করেছি।’

এই মামলার সাক্ষী একে আজাদ বলেন মামলার আসামীরা অত্যান্ত প্রভাবশালী তারা ময়নাতদন্তে এবং ভিসেরা রিপোর্ট ঘুরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

মামলায় বাদীর আইনজীবী মানিক আচার্য্য জানান, বানারীপাড়া ছলিয়াবাকপুর খাজুরবাড়ি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা দিনমজুর হিরন হাওলাদারের শিশু কন্যা কাজলকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ঝালকাঠির বালিঘোনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান হাওলাদার ও তার ভাই ধর্ষণ করেছে।

অন্যান্য আসামীরা নির্যাতন করে কাজলকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রভাবশালী আসামীদের অপতৎপরতায় বাদী হিরনের ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি সংক্রান্ত কাগজ ও ব্যবস্থাপত্রে কাজলের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। নির্যাতনের পর যথাসময়ে কাজলের চিকিৎসা হলে হয়তো কাজলকে বাচানো যেতো।

এ ব্যাপারে ডিবির এস আই আমিনুল ইসলাম আপোষের জন্য বাদীকে ডিবি পুলিশের চাপ প্রেয়োগের বিষয় অস্বীকার করে বলে মামলাটি তদন্ত শেষ করে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে।”

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন