১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঝালকাঠির এমপি বিএইচ হারুনের দুর্নীতি তদন্তে দুদকের তোড়জোড়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, ০৫ অক্টোবর ২০১৭

সরকারদলীয় এমপি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক বিএইচ হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটির অনুসন্ধান শেষ করতে এবার তোড়জোর শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সরকার দলীয় এই এমপির বিরুদ্ধে দুদক দীর্ঘ এক বছরেও অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। এনিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, কমিশন তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি বিএইচ হারুনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রমের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্ভরশীল একটি সূত্র সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, বিএইচ হারুনের অসহযোগিতার কারণেই দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে অভিযোগটির অনুসন্ধান কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কমিশন এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম এবার গতি পাবে।

এরই মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি সামসুদ্দিন চৌধুরী, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জাহিদ চৌধুরী, এভিপি আশরাফুল আযাদ, জুনিয়র অফিসার আকবর হোসেন, মো. মাইনুল ইসলাম, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বনানী শাখার ক্যাশ অফিসার সৈয়দা রোজিনা আক্তার ও ওয়ান ব্যাংক গণকবাড়ি ইপিজেড শাখার সিনিয়র অফিসার মনিরুজ্জামানকে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক। বিএইচ হারুনকেও যেকোনো সময় দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে।

অভিযোগটির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম।

দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম গত বছরের ২ আগস্ট প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডির কাছে বিএইচ হারুনের ব্যাপারে ১৭ ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেন। কিন্তু তথ্য না পাওয়ায় আবার চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো চিঠি দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করেনি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান দুদকে হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের এই অভিযোগটি দায়ের করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের জুলাইতে হারুনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তখন অভিযোগটির তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। এক বছরে পেরিয়ে গেলেও তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি।

মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান দুদকে দাখিল করা অভিযোগে সাংবাদিকদের বলেন, তার ব্যাংক হিসাব থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক এমপি বিএইচ হারুন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ১৩৪ কোটি ‍টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রিমিয়ার ব্যাংক বংশাল শাখা থেকে রুমী এন্টারপ্রাইজের নামে চেকবই ইস্যু দেখিয়ে ওই প্রতারণাটি করা হয়।

তার টাকা আত্মসাৎ করে এমপি হারুন ব্যাংকের দেনা পরিশোধ, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়, বনানী ও বারিধারায় বহুতল ভবন নির্মাণ, তার বড় ছেলেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক করা, দুটি জাহাজ ক্রয়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট ক্রয় ও ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়সহ নানা খাতে ব্যয় করেছেন।

বিএইচ হারুনের দুর্নীতি তদন্তের প্রতিবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশনে দাখিল করার নির্দেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিএইচ হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার একটি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানে কমিশন থেকে যথারীতি তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হয়। কিন্তু প্রিমিয়ার ব্যাংক কমিশনকে কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না।

একারণে তদন্ত কার্যক্রম অনেক দিন ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু অভিযোগটির বিষয়ে কমিশন থেকে এবার তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সত্য মিথ্যা যাচাই করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন