২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

তীব্র শীতে ঝালকাঠি ঝরে পড়ছে পানের পাতা, দিশেহারা চাষি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৮ অপরাহ্ণ, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

ঝালকাঠিতে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে ছত্রাকজনিত অজ্ঞাত রোগে পচে যাচ্ছে পান। গত এক সপ্তাহে এ রোগে পানগাছের পাতা ঝরে পড়ছে। এমন পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে বাজারে পানের সরবরাহ খুব বেড়ে যাওয়ায় কমে গিয়েছিল পানের দাম। বর্তমানে পানের সংকট থাকায় বাজারে আগুন সমতুল্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

এই বাস্তবতায় ব্যাংক ঋণ নেওয়া চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আগে পান চাষিরা বাজারে এক চলি-(৩৬ পিস) ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করলেও বর্তমানে পান সংকটের কারণে প্রতি চলি-(৩৬ পিস) সত্তর থেকে আশি টাকা দরে সেই পান বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পানের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ‘বারকইকরন’র পানচাষি অলিউর রহমান বরিশালটাইমসকে জানান, তার ৩০ শতাংশ জমিতে পানের বরজ রয়েছে। অজ্ঞাত রোগে পান ঝড়ে যাচ্ছে। এতে তার ৪০ হাজার টাকার পান নষ্ট হয়েছে।

সদর উপজেলার বারই বাড়ি এলাকার পান চাষি অসিম মন্ডল জানান, তার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।

কৃষিবিদ কামরুন্নাহার তামান্না বরিশালটাইমসকে জানান, পান একটি অর্থকারী ফসল। আমাদের দেশে পানের বরজ খুব বেশি দেখা না গেলেও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। দেশে বিদেশে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

এতে অনেক ঔষধি গুণ বিদ্যমান। কিন্তু রোগবালাই পান উৎপাদনের একটি প্রধান অন্তরায়। পানে গোড়া পচা, ঢলে পড়া, পাতা পচা, অ্যানথ্রাকনোজ, সাদা গুঁড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। সেক্লরোসিয়াম রফসি নামক ছত্রাক। ছত্রাকগুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে।

মাটিতে জৈব সার বেশি ও খড়কুটো থাকলে এবং পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে। রোগাক্রান্ত লতা-পাতা বরজ থেকে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী পানের জাত ব্যবহার করতে হবে।

গভীর ভাবে জমি চাষ দিয়ে রোদ্রে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। নতুন বরজ তৈরির ক্ষেত্রে সুস্থ সবল রোগমুক্ত পানের লতা সংগ্রহ করতে হবে। পানের বরজ সবসময় আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ট্রাইকোডারমা কম্পোস্ট সার প্রতি গাছে ৫ গ্রাম হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

লতা রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা ব্যভিস্টিন দ্বারা লতা শোধন করে নিতে হবে। বরজে রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স বা ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

ঝালকাঠি জেলা অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বরিশালটাইমসকে জানান, আমরা চাষিদের পাশে আছি। সবসময় চাষিদের প্রয়োজনানুযায়ী পরামর্শ দিতেছি। প্রাকৃতিক কারণে এখন পান চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক বরিশালটাইমসকে জানান, পানচাষিদের এ মৌসুমে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। বরাদ্দ এলে সহায়তা করা হবে।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন