২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত আটঘর কুড়িয়ানা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারাবাগান এলাকা। এই পর্যটন গন্তব্যে পৌঁছাতে সড়ক ও নৌপথে নানা ঝক্কি-ঝামেলা থাকা সত্ত্বেও দর্শনার্থীদের পদচারণা রয়েছে সব সময়। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ২০৭০টি পরিবার এই পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সরু সরু খালের দুপাড়ে দৃষ্টিনন্দন পেয়ারাবাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য দর্শনার্থী। তাঁদের অনেকেই বলছেন, বরিশাল বিভাগের মধ্যে যদি তিনটি দর্শনীয় স্থান চিহ্নিত করা হয় এর মধ্যে ১ নম্বরে উঠে আসবে এই দেশীয় পেয়ারাবাগান ও ভাসমান হাট। পাশাপাশি এখানে রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে নৌকা তৈরি ও বিক্রির হাট।

তিনবার ভ্রমণে আসা ফটোগ্রাফার ম ম মোস্তফা বলেন, অদ্ভুত এক ভালোবাসার টানেই এখানে আসি। তবে এখানটাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটত।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানায়, বিগত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে পেয়ারাবাগানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সের ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরা লঞ্চ, বাস ও মাইক্রোবাসসহ নানা বাহনে করে এই এলাকায় ঘুরতে আসছেন। এখানে এসে বাগানের ভেতর যাওয়ার জন্য তাঁরা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার অথবা নৌকা ভাড়া করে তাতে চড়ে ঘুরে বেড়ান। শুধু পেয়ারাবাগানেরই নয়, এখানকার ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি খালে নৌকায় করে পেয়ারার হাট বসে। এই হাটে মৌসুমে হাজার হাজার টন পেয়ারা বিক্রি হয়।

পেয়ারা ব্যবসায়ী রাসেল জোমদ্দার জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পেয়ারা কিনে লঞ্চ, ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকে। এসব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থীদের ভিড়ে সরগরম থাকে কুড়িয়ানা।

ঘুরতে আসা ট্রাভেল বাজ বিডির সদস্যরা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পেয়ারাবাগান এলাকায় গড়ে উঠতে পারে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র এবং সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

বেড়াই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মাহামুদ হোসেনই প্রথম থাইল্যান্ডের ফ্লাটিং মার্কেটের মতো স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগানকেও পর্যটনশিল্প হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একটু একটু করে পরিবেশ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু দরকার আরো পৃষ্ঠপোষকতার।

চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ঢাকাসহ দূর-দূরান্তের নানা বয়সী ভ্রমণপিপাসু অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় রয়েছে এখানে। বিশেষ করে শুক্র-শনিবার দুদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। দর্শনার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা এলাকা থাকে মুখরিত।

পর্যটকরা জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করলেও এখানে নেই কোনো বিশ্রামাগার। মানসম্মত খাবারের দোকান, টয়লেট, নারীদের জন্য গোসল এবং কাপড় পাল্টানোর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

উপজেলার আদমকাঠি এলাকার পাঁচজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণ তিন একর পেয়ারাবাগান লিজ নিয়ে পেয়ারা পার্ক নামে একটি মিনি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলেছেন এ বছর। পার্কের পরিচালক অতনু হালদার বরিশালটাইমসকে জানান, সহনীয় পর্যায়ে খরচের মাধ্যমে পর্যটকদের বিনোদন সহায়তার পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করাই তাদের লক্ষ্য।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ জামান খান কবির আটঘর কুড়িয়ানায় গত বছর সফরকালে আদমকাঠিতে একটি বিশ্রামাগার ও হোটেল নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করেন। এ লক্ষে খসড়া প্ল্যান তৈরিও করা হয়েছিল। কিন্তু চাহিদা মতো জমি না পাওয়ায় বিশ্রামাগার ও হোটেল নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বরিশালটাইমসকে জানান, যেখানে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল সেখানে চাহিদামতো জমি নেই বিধায় অন্যত্র জমি খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই জমির ব্যবস্থা হবে বলে তিনি আশাবাদী।

আটঘর এলাকার সমাজসেবক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন চৌধুরী বরিশালটাইমসকে জানান, সরকার যদি পর্যটনকেন্দ্রের জন্য আটঘরকে নির্বাচন করে তাহলে এখানে প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা করা যাবে এবং চারদিক থেকে যোগাযোগব্যবস্থা থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরা সহজেই এখানে আসতে পারবেন।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন