২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নৌকাতেই তাদের জীবন সংসার!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:০০ অপরাহ্ণ, ২৪ জুন ২০১৮

আধুনিক সভ্যতায় মানুষ যেখানে উন্নত জীবন-যাপন করছে সেখানে মানতা সম্প্রদায়ের লোকরা শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এখনো পিছিয়ে আছে। নৌকাতেই জীবন কাটে তাদের। জন্ম, বিয়ে, সংসার ও মৃত্যু সবকিছুই নৌকাতে।

নদী কিংবা সাগরে নৌকায় ভেসে ভেসে মাছ শিকার করে চলে তাদের জীবন-সংসার। যে নদীর পানিতে জীবন সেখানেই আবার মরণ। তাদের নিজস্ব কোনো ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর দেহ পানিতেই ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এ মানুষগুলো মুসলমান হলেও মানতা সম্প্রদায় নামে পরিচিত।

এ সম্প্রদায়ের একজন পারুল বেমগ। ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট এলাকায় ঘাটে নোঙর করা একটি নৌকায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসেছিলেন তিনি। চোখ মুখে তার দুশ্চিন্তার ছাপ। নদীতে মাছ শিকার শেষ করে ঘাটে এসেছে পারুলদের নৌকা। তার স্বামী আলমগীর সর্দার ৪-৫টি মাছ নিয়ে আড়তে বিক্রির জন্য গিয়েছেন। তার অপেক্ষা মাছ বিক্রির টাকা হাতে পেলে দুমুঠো খাবার ব্যবস্থা হবে।

এমন সময় ছবি তুলতে গেলে পারুল বলেন, ‘ছবি তুলে কি হবে, আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমারা কোনো সাহায্য পাই না, আমাগো নৌকা বদল হয় কিন্তু ভাগ্য বদল হয় না, ছবি তুলে কি করবেন?’

শুধু পারুল নয়, তাদের মতো অর্ধশতাধিক মানতা নারী-পুরুষের নৌকা বহর ইলিশা ও জোরখালে ঘাটে ভেড়ানো। সারাদিন জাল বেয়ে নদীতে সেটুকু মাছ পাবেন তা বিক্র করেই সংসার চালাবেন তারা। কিন্তু ইলিশ সংকটে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্দিন। পারুলদের মতো অনেকের অবস্থা একই, জলে জড়ানো জীবনে ভাগ্য বদল হয় না তাদের।
পারুল বেগম বলেন, ‘এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নৌকায় ভাসমান সংসার আমার। আগে বাবার নৌকায় ছিলাম। এখন স্বামীর নৌকাতে। নৌকা বদল হলেও জীবন বদলায়নি আমাদের। গত এক সপ্তাহে মাত্র দুই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে গিয়েই তা শেষ হয়ে গেছে।’

পারুল বলেন, ‘আমাদের আবার আনন্দ উৎসব! ভাতের যোগাড় করতেই কেটে যায়। কিভাবে খাবার জোগাড় করব সে চিন্তায় দিন কেটে যায়। সেখানে আবার আনন্দ। নদীর উত্তাল ঢেউয়ে চাপা পড়ে যায় আমাদের আনন্দ। নদীতেই জীবন নদীতেই মরণ।’

ঘাটে নোঙর করা নৌকায় তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছেন মানতা সম্প্রদায়ের ফরিদ মিয়া। নদীতে ইলিশ সংকটে যেন সংকটময় হয়ে পড়েছে তার জীবন। ফরিদ বলেন, ‘নদীতে মাছ কম, তাই আয়-রোজগার নেই। দুই দিন মাছ বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৭০০ টাকা। তা দিয়ে পেটের ব্যবস্থা করব নাকি নৌকার জন্য তেল কিনব। সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জোরখাল এলাকায় তাদের নৌকার শতাধিক বহর। যারা নৌকায় বসবাস করেন। তাদেরও একই অবস্থা, নদীতে মাছ নেই, তাই মানতা পল্লীতে হাসি নেই। সবার যেন মলিন মুখ।’

উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে আলমগীর ও পারুল বেগমদের মতো মানতা সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা নৌকাতেই। একটু মাছ পেলে মুখে হাসি ফুটে নয়তো মলিন মুখ। জলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে কখনো কখনো আশা-স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় তাদের।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন