২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নয়নে লাগিল নেশা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:১৪ অপরাহ্ণ, ১৮ মার্চ ২০১৬

আকাশে বহিছে প্রেম,নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে
কোকিলের কুহু তান শোনা যায়, বসন্ত এসে গেছে বলেই কি? বঙ্গদেশের কবির ভাষায় যে ঋতুকে নানা বিশেষনে আহব্বান! সেই বসন্ত আজ নিউইয়র্কের দোর গোড়ায়। ইউএসএ এস্ট্রোনোমিকাল সোসাইটির দিনপূঞ্জির হিসাবে আগামী ২০শে মার্চ ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী দিবস। দুনিয়ার অধিকাংশ দেশের ন্যায় আমেরিকাতে যে চারটি সিজন বা বছরের অংশ আছে তারই মধ্যে স্প্রিং অর্থ্যাৎ বসন্ত প্রথম। তারপর ক্রমানুসারের সামার, ফল (ব্রিটিশ ভাষায় অটাম) শেষে শীত।

 

প্রতিটির সিজনের একেকটি নান্দনিক রুপ আছে তার মাঝে ঋতুরাজ বসন্তের শুরু হয় খুবই বর্নালী ঢঙে। পুরো শীতের সময় টা ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে থাকা। এর উপর বার দুয়েকের তুষারপাতের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা কখনই সুখকর নয়। স্বাভাবিক ভাবে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে বসন্ত আসছে বলে জানান দিয়ে থাকে। মার্চের শুরুতেই শীতের সিজনাল বিদায় ভাবের আঁচ পাওয়া গেলেও বসন্তের রঙিন আগমন ঘটে মার্চের মাঝামাঝি। নিউইয়র্ক তখন ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে, সাথে নিউইয়র্ক বাসী। প্রথমে খালি চেখে বদলপর্বটি ধরা পড়ে পোষাকের পরিবর্তনে। শীতের অত্যাচারে বাঁচার তাগিদে ২/৪ প্রস্ত গরম কাপড পরবার প্রয়োজন কমে আসে। সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ হল বাজারে আসা বসন্ত উপযোগী পরিধেয় রঙিন পোষাক নির্বাচন। সাথে সাথে কেনাকাটার ব্যস্ততা। প্রতিবছর এই শহরে নামী দামী ফ্যাশন হাউসগুলি এই সময়টায় জমজমাট ফ্যাশন শোর আয়োজন করে। যাতে দুনিয়ার সুবিখ্যাত
ডিজাইনার সাথে দামী দামী মডেলদের সরব অংশগ্রহনে নিউইয়র্ক পায় আরেক পরিচয়। শীতে ঝরে যাওয়া গাছ গাছালীতে আসে প্রান। ফুলে ফুলে চেয়ে যাওয়া পথের পাশে বা বাসাবাডীতে হরেক রকম নানা জাতের গাছের চেহারাতে আসে দারুন পরিবর্তন। সবুজাভ নতুন পাতার সাথে গোলাপী মঞ্জুরীর মিলনে যে রুপ আসে তা শুধু গোলাপী বধূর লাজ শিক্ত আভাতেই দেখা মিলে। অপরুপ সেই রুপের মাঝেই নিউইয়র্কবাসী পায় জীবন উপভোগের যথার্থতা।

 
স্কুল কলেজে স্প্রিং ব্রেকে প্রায় ৩ সপ্তাহের জন্য বন্ধ দেওয়া হয় বলে ছোট বড় সবাই নানা ভাবে বসন্ত উপভোগের প্ল্যান করে থাকে। শত শত ভাষা ভাষী নানা জাত সম্প্রদায়ে বিভক্ত নিউ ইয়র্ক বাসীদের নিকট বসন্তের এই সজীব ও সতেজ আবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপন ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক নিয়মানুসারে পালিত হয় নানান জাতের উৎসব। এ সময় নিউইয়র্কের উৎসব পাড়া বলে খ্যাত ম্যানহাটানের বর্ডওয়ে’তে কনসার্ট, ড্রামা, সার্কাস প্রদর্শনীর ধুম পড়ে যায়। নিউ ইয়র্ক হয়ে উঠে উৎসবের নগরী।

 

স্প্রিং সিজনের বড় একটি অনুষ্ঠান হল আইরিশদের প্রধান উৎসব এসটি প্যাট্রিক ডে প্যারেড। সেন্ট প্যাট্রিক নামে একজন বিখ্যাত ধর্মযাজকের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানোর নিমিত্তে প্রতিবৎসর মার্চ মাসে নগরীতে বনার্ঢ্য প্যারেড বা মিছিল হয়। সেদিন পুরা নিউইয়র্ক নগরী আইরিশ জাতির প্রিয় রং সবুজ ফ্ল্যাগ হাতে সবুজ পোষাকে জলমল করতে থাকে। বসন্তকে নগরীর প্রতিটা কমিউনিটি সুদৃশ্য ফুল দিয়ে বরন করে। সাথে থাকে সংগীতের মোহনীয় আয়োজন। বাংলাদেশী প্রবাসীরাও এসব আয়োজনে অনেক উৎসাহ নিয়ে যোগ দেন। আজকাল দেশীয় নানা ধরনের সুস্বাদু পিঠার প্রদর্শণী নিয়ে ব্যপক উৎসাহের সাথে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। নগরীর সবচেয়ে বৃহৎ পার্ক বলে খ্যাত সেন্ট্রাল পার্কে পাখি পর্যবেক্ষন, সাইক্লিং, বোটিং সহ নানা চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান বসন্তের এই মনোরম পরিবেশে আয়োজিত হয়ে থাকে। শীতের এই বদ্ধ খোলশ ছেড়ে মানব ও প্রকৃতি যেন একযোগে বসন্তের এই নব প্রান সঞ্চারিনী যৌবনের সাথে মিতালী করতে উন্মুখ।

 

সহনীয় উষ্ণতায় রোদ্রকরোজ্জল এই দিনে নিজের সবচাইতে প্রিয় পোষাকটি পরে বাইরে বেরুনোর আরেক নাম বসন্ত। সাগরের নোনা জলে ঢেউয়ের দোলায় উদ্দাম সন্তরনের জন্য সাগরতীরে ছুটে যাবার এখনি সময়তো শুধু বসন্তেই আসে। কখনও বালুকা বেলায় বেলাভূমিতে আছডে পড়া ঢেউয়ের পাশাপাশি প্রেমিকার হাত ধরে সূর্যাস্ত দেখার জন্য বসন্তের প্রহর গুনতে হয়।
তাই বলেতো প্রেমের প্রথম পাঠের শুরু বসন্তের পাশে। বসন্তের অগনিত হাজারো চুম্বকত্ব আবেদনের বৃহদাংশ রয়ে যায় শুধুই অনুভবে।

 

তাই বলে লক্ষাধিক নিউইয়র্ক বাসীর কাছে বসন্তের এই আবেদন যেমন নূতন ফুলের সুবাশের মত প্রিয়। তেমনি বসন্ত প্রেমিক নিউইয়র্ক বাসী বসন্তের ভালবাসায ফিরে পায় বুনো যৌবনের স্বাদ পাওয়া প্রানের ছোঁয়া। পরিশেষে বলি এসো হে বসন্ত, সিক্ত কর মোদের চিত্ত, প্রানের এই উৎসবে।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন