২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

পদ্মা সেতুর ১৪ পিয়ারের পরিবর্তিত নকশা নিয়ে জটিলতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৫৫ অপরাহ্ণ, ২১ নভেম্বর ২০১৭

পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের নকশায় পরিবর্তন আনার লক্ষে চলতি বছরের ১৭ জুলাই মাওয়া সফর করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউয়ির বিশেষজ্ঞ দল। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ওই পরিবর্তিত নকশা চূড়ান্ত করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। প্রকল্প কর্মকর্তারাও এমন কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত হয়নি নকশা। এতে কাগজে-কলমে ছয় মাস পিছিয়ে থাকা পদ্মা সেতুর কাজ আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন- পদ্মা সেতুর যেসব পিয়ারের নকশায় পরিবর্তন আনা হবে, সেগুলোর মাটির লোড টেস্ট করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী বিশ্লেষণও করতে হচ্ছে। প্রক্রিয়াগুলো জটিল হওয়ায় নকশা প্রণয়নে বিলম্ব হচ্ছে। এ কাজের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞরা এখনো কাজ করছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পদ্মা সেতুর পরিবর্তিত নকশা প্রণয়নে কাউয়ির কাজ তত্ত্বাবধান করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কলম্বিয়া ও বাংলাদেশের সেতু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘প্যানেল অব এক্সপার্ট টিম’। এ বিশেষজ্ঞ টিমই পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিবর্তিত নকশা অনুমোদন করবে।

সেতু বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এডিবির অর্থায়নে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব পায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম। কাজ শুরু হয় ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে। নকশা প্রণয়নে মনসেল-এইকমের সঙ্গে ১১৪ কোটি টাকার চুক্তি হলেও নিয়োগের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩১ কোটি টাকায়। চুক্তির সময় নকশা প্রণয়নের মেয়াদ ছিল ২২ মাস। পরে নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানকে ১৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হলেও ২২ মাসের বেশি সময় লেগে যায়।

নকশা প্রণয়নে মনসেল-এইকম বহুজাতিক স্মেক ইন্টারন্যাশনাল, কানাডার নর্থওয়েস্ট হাইড্রলিক কনসালট্যান্টস ও বাংলাদেশের এসিই কনসালট্যান্টসের পরামর্শ নেয়। এর বাইরে নরওয়ের এএএস জ্যাকবসেন ও যুক্তরাজ্যের এইচআর ওয়েলিংফোর্ডেরও সহায়তা নেয়া হয়।

মনসেল-এইকমের করা নকশা অনুযায়ী, সেতুতে পিয়ার হবে ৪২টি। এর মধ্যে ৪০টি নদী অভ্যন্তরে, বাকি দুটি দুই প্রান্তে। প্রতিটি পিয়ারে হবে ছয়টি করে পাইল। নদী অভ্যন্তরের পিয়ারগুলোর গভীরতা ৯০-১২০ মিটার হওয়ার কথা বলা হয়েছিল মূল নকশায়।

পরবর্তীতে মাটি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন স্থানের ১৪টি পিয়ারে জটিলতা দেখা দেয়। এসব পিয়ারে নদীর তলদেশের ১১৫-১২০ মিটার গভীরে পাওয়া যায় কাদার স্তর। ফলে সেগুলোয় আগের নকশা অনুযায়ী কাজ করা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা।

বিষয়টি সম্পর্কে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্ট টিমের সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সেতু এলাকায় নদীর তলদেশের বিভিন্ন স্থানের মাটিতে ভিন্নতা রয়েছে। এ কারণে ১৪টি পিয়ারের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে।

মূল নকশা অনুযায়ী, প্রতিটি পিয়ারে ছয়টি পাইল হওয়ার কথা। তবে মাটির গভীরে কাদার স্তর থাকায় আরো একটি পাইল করতে হতে পারে। পাশাপাশি পাইলের গভীরতাও ১০ মিটার পর্যন্ত কমাতে বা বাড়াতে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব পিয়ারের নকশায় পরিবর্তন আনা হবে, সেগুলোয় মাটির লোড টেস্ট করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী বিশ্লেষণও করতে হচ্ছে। প্রক্রিয়াগুলো জটিল হওয়ায় নকশা প্রণয়নে দেরি হচ্ছে।’

মনসেল-এইকম মূল নকশা প্রণয়ন করলেও পরিবর্তিত নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউয়িকে। এ কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করছে পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক রেন্ডাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস।

মূল নকশা ও পরিবর্তিত নকশার দায়িত্ব দুই প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইকমের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবর্তিত নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া সম্ভব হয়নি।’

মূল নকশা ও পরিবর্তিত নকশা দুই ভিন্ন প্রতিষ্ঠান করলে কোনো সমস্যা তৈরি হতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত নকশা মূল নকশায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। পুরো সেতুর কাজ মূল নকশা অনুযায়ীই হচ্ছে।’ এ সময় আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই পরিবর্তিত নকশা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে- চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ ৫১ ও নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যার পুরোটাই বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৩৮-৩৯ ও ৩৯-৪০ নম্বর পিয়ারে আরো দুটি স্প্যান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে এসব পিয়ারে কাজ চলমান।

পিয়ারগুলোয় তৃতীয় ধাপের ঢালাই হয়েছে। স্প্যান বসানোর উপযোগী করতে আরও একটি ঢালাই প্রয়োজন। প্রকল্পের কাজে গতি আনতে মাওয়ায় পৌঁছেছে জার্মানিতে তৈরি সাড়ে তিন হাজার কিলোজুল ক্ষমতার একটি হ্যামার। শিগগিরই এটি দিয়ে পাইল ড্রাইভ শুরু হবে।’’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন