২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পাথরঘাটায় ৫ বছরে ১৩ বেওয়ারিশ লাশ, মেলেনি পরিচয়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরের লাগোয়া গ্রাম গহরপুর। গত ২৯ আগস্ট ওই গ্রামের আইউব আলী হাওলাদারের একটি নির্জন দীঘির পাড়ে তাল কুড়াতে যান এক নারী। এ সময় পানিতে উপুড় হয়ে থাকা মানুষের শরীরের মতো কিছু ভাসতে দেখেন তিনি।

তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসে এলাকার লোকজন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ টাইটস, বোরকা ও পায়ে পায়েল পরিহিত ২৪ থেকে ২৫ বছরের এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের পর কোনও দাবিদার না থাকায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান এ মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয় বিকৃত লাশটি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় খবর। পুলিশ সারা দেশের থানায় বার্তা পাঠায়। চলছে তদন্ত কিন্তু কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহতের পরিচয় অজ্ঞাত, হত্যাকারীর পরিচয় অজ্ঞাত। ধারণা করা হয় রাতের কোনও এক সময় তাঁকে হত্যা করে ওই দীঘিতে ফেলে গা ঢাকা দিয়েছে হত্যাকারী। কে সেই হত্যাকারী, কে ওই নিহত নারী- এসব প্রশ্ন এখন সারা উপজেলাবাসীর মনে।

একের পর এক বেওয়ারিশ লাশ পড়ার খবরে দিন দিন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষের মনে।

পাথরঘাটা উপজেলায় এ ধরনের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়ার ঘটনা চলছে ২০১৩ সাল থেকে। এ পর্যন্ত লাশ পড়েছে ১৩টি। এর মধ্যে দুইটি ছাড়া কোনও হত্যাকারীর পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। পরিচয়হীন রয়েছে নিহতরা। পুলিশ তদন্ত করছে বছরের পর বছর। কিন্তু ফল শূন্য। প্রায় অর্ধেক মামলায় দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

পাথরঘাটা থানা সূত্রে জানা গেছে- ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাথরঘাটায় অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার করা হয় ১৩টি। এগুলো হলো ২০১৩ সালে একটি, ২০১৪ সালে দুইটি, ২০১৬ সালে তিনটি, ২০১৫ সালে চারটি, ২০১৭ সালে দুইটি এবং ২০১৮ সালে একটি।

লাশ প্রাপ্তিস্থানের মধ্যে থানার সন্নিকট, পাথরঘাটা পৌরসভা ভবনের নিকট, কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের ডোবা, উপজেলা পরিষদ পুকুর, কলেজ প্রাঙ্গণের পুকুর ও খাল অন্যতম। মামলাগুলো তদন্ত করছে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় তদন্ত করে নিহতের বা হত্যাকারীর পরিচয় উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ইতিমধ্যে ছয় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ।

পাথরঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা মো. খবীর আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে তদন্ত করেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেও হত্যার কোনও রহস্য অথবা সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় অবশেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হচ্ছে। কোনও নিহতের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

গত বছর ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজ প্রাঙ্গণের পুকুর থেকে পানিতে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে চার ছাত্রলীগ নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। কিন্তু ওই হতভাগ্য তরুণীর পরিচয় কী- তা আজও জানতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ। অবশেষে গত ১২ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

বরগুনা জেলা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বেওয়ারিশ লাশ পড়তে থাকলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। হত্যা রহস্য উদঘাটন ও বিচারের আওতায় আনার জন্য শুধু পুলিশ নয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা আবশ্যক।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জেলায় এসেছি অতিসম্প্রতি। কতকগুলো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবু যতদূর জানি সকল থানায় বার্তা পাঠানো হচ্ছে। মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করাচ্ছি। উদ্ধারকৃতদের চেহারা বিকৃত। কেউ তাদের খুজঁতে আসে না। হত্যা রহস্য বের করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য পুলিশ যথাসাধ্য চষ্টো করে যাচ্ছে।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন