১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পিরোজপুরের জড়াজীর্ণ ৭ কমিউনিটি ক্লিনিকে চলছে স্বাস্থ্য সেবা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৫০ অপরাহ্ণ, ০৫ অক্টোবর ২০১৮

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে জড়াজীর্ণ অবস্থায় থাকায় রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে চরম ভোগান্তির সৃস্টি হচ্ছে। জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ২০০৯ সালে পুনঃরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এর আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এসব ক্লিনিকগুলোর সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই উপজেলার ৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামোগত অবস্থা অনেকটাই নাজুক।

জানা গেছে, ইন্দুরকানী উপজেলায় লক্ষাধিক জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য ১৯৯৯-২০০২ সালে ৮টি এবং ২০১২- ২০১৩ সালে ৩টি এবং ২০১৭ সালে ১টি সহ এ পর্যন্ত মোট ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে দীর্ঘ ৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ক্লিনিকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের অক্টোবরে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়োগের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে।

বর্তমানে এই উপজেলার খোলপটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, চাড়াখালি কমিউনিটি ক্লিনিক, জোমাদ্দারহাট কমিউনিটি ক্লিনিক, তালুকদার হাট ক্লিনিক, ভবানিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, বাড়ৈইখালী কমিউনিটি ক্লিনিক ও উমেদপুর কমিউনিটি ক্লিনিক একেবারে জড়াজীর্ণ। এছাড়া মধ্য বালিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, কালাইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক ও ঢেপসাবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামোগত অবস্থা তেমন একটা ভালো না। এসব ক্লিনিকের বাথরুম ও টিউবওয়েল দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় আশপাশের বাড়িতে গিয়ে প্রকৃতির কাজ সারতে হচ্ছে সিএইচসিপি ও ক্লিনিকে আগত রোগীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকগুলোর ফ্লোর ও দেয়ালের প্লাষ্টার খসে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে এবং বিভিন্ন অংশ দেবে গেছে। কয়েকটি ক্লিনিকের অবস্থা এতটাই ঝূঁকিপূর্ণ যে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ক্লিনিকগুলোর দরজা-জানালায় জং(মরিচা) ধরে দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব ক্লিনিকের ছাদ চুয়েই পানি পড়ে ওষুধসহ সমস্ত আসবাবপত্র ভিজে যায়। বর্ষার সময় ছাদ থেকে পানি পড়ায় সিএইচসিপিরা ছাদে পলিথিন ব্যবহার করে কোনো মতে পানি পড়া বন্ধ করার চেস্টা করেন। ক্লিনিকগুলোর এই বেহাল অবস্থার কারণে স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় অস্বস্তিতে। এছাড়া কিছু কয়েকটি ক্লিনিকে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ সুবিধা। যার কারণে গ্রীস্ম মৌসুমে গরমের মধ্যে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখানকার ক্লিনিক গুলোতে নরমাল ডেলিভারি করানোও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সিএইচসিপিরা। তাছাড়া এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ইনডোর চালু না হওয়ায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

খোলপটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিজি সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আবুল হোসেন জানান, খোলপটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি খালের পাড়ে থাকায় যেভাবে ফাটল ধরেছে তাতে যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ এলাকার ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামোগত নানান সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা প্রদানে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জোমাদ্দারহাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নাজমুন্নাহার এবং চাড়াখালী সিসির মিতু রানী বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ক্লিনিকের ছাদ চুঁয়েই পানি পড়ে সমস্ত আসবাবপত্র ভিজে যায়। এ কারণে রোগীদের সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটছে।

এ বিষয়ে খোলপটুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি পড়ার কারণে এই ক্লিনিকগুলোতে বসার কোনো পরিবেশ থাকে না। বাথরুম, টিউবওয়েলও রয়েছে অকেজো অবস্থায়। কয়েক বছর যাবত চলছে এই দুরাবস্থা।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার ঘোষ বলেন, যেসব কমিউনিটি ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ ও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে সেসব ক্লিনিক গুলোর মধ্যে ৭টি ক্লিনিক ভেঙ্গে পুনঃ নির্মাণ এবং ৩টি ক্লিনিক দ্রুত সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন