২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পিরোজপুরে এতিমখানার নামে সরকারি অর্থ লুটে নিচ্ছেন ‘বাটপার গফফার’!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৯ অপরাহ্ণ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলায় ভুয়া এতিমের নামে সরকারি টাকা তুলে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আব্দুল গফফার (৬০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তিনি ‘গফফার সিকিউরিটি’ নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানি খুলে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নানা প্রতারণামূলক কাজের জন্য তিনি এলাকায় ‘বাটপার গফফার’ নামে পরিচিত। তা ছাড়া তাঁর আরেকটি নামও রয়েছে। এলাকায় তিনি ‘কাঁথা চাপা গফফার’ নামেও সুপরিচিত।

এ বিষয়ে দাউদখালী ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক রাহাত খান বরিশালটাইমসকে বলেন, আশির দশকে উপজেলার দধিভাংগা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বেপারী দোকানের মালপত্র কিনতে খুলনার উদ্দেশে রওনা হলে দলবল নিয়ে তাঁর পথ রোধ করেন গফফার। পরে ওই ব্যবসায়ীকে ‘কাঁথা চাপা’ দিয়ে মুড়িয়ে রেখে তাঁর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা লুট করেন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় ‘কাঁথা চাপা গাফ্ফার’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

গাফফারের এতিমখানার নাম ‘হাজী গুলশান আরা শিশু সদন’। এটি তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত। ভুয়া এতিম দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন গফফার। সম্প্রতি এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তের পর গত ৩ জুন এতিমের নামে সরকারি অর্থের বিলে স্বাক্ষর না করায় গফফার ও তাঁর সহযোগীরা মঠবাড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আখলাকুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা সমাজসেবা অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় মামলা হলে গফফারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এ ঘটনার পর গফ্ফারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও প্রভাব খাটানোর চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় হারজী গ্রামের মৃত কাঞ্চন সিপাহীর ছেলে আব্দুল গফ্ফার শুধু এতিমখানা নয়, গফ্ফার সিকিউরিটি নামে একটি প্রাইভেট কম্পানি গড়ে তোলেন। এর মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিতে মাঠপর্যায়ের কর্মী নিয়োগ করে আসছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে ৪৯ জন ভুয়া এতিমের নামে সরকারি টাকা উত্তোলন করার অপরাধে থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল বারেক তাঁকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। ওই সময় গফ্ফার আট মাস জেল খেটেছিলেন।

এদিকে স্থানীয় সমাজসেবা দপ্তর সূত্র জানিয়েছে- পল্লী মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে আব্দুল গফফারের একটি সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার নাম ব্যবহার করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে দরিদ্র ভিজিডির কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত দুস্থ মহিলাদের ট্রেনিং ও পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ পান। কিন্তু কোনো কাজ না করেই কর্মসূচির পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন গফ্ফার।

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর বরিশালটাইমসকে বলেন- ‘গফফারকে চিহ্নিত বাটপার ও দালাল হিসেবে এলাকাবাসী জানে। সে চাকরি দেওয়ার নাম করে এরই মধ্যে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বাচ্চু মিয়া আকন বরিশালটাইমসকে জানান- গফফারের বাবা কাঞ্চন হাজি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় দাউদখালী ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বরিশালটাইমসকে বলেন- অভিযুক্ত গফ্ফার এখন কারাগারে আছেন। গত ১ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন