১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পুকুর খনন করতেই দুই-টনের মিসাইল বোমা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৩ অপরাহ্ণ, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

মিসাইল বোমা ! তাও আবার একটা নয় দুটো। লম্বায় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট। সঙ্গে ভর্তি মশলা। শুধুমাত্র মশলার ওজনই প্রায় পাঁচশ পাউন্ড। সিলিন্ডারের ওজন ধরে তা কমপক্ষে এক টন। দু’টি বোমার আনুমানিক ওজন দু’টনের কাছাকাছি। চমকে ওঠার মতো ঘটনা ঘটল এমনই দু’টি মিসাইল বোমা উদ্ধার হওয়ার ঘটনায়। তাও আবার পুকুরের মধ্যে।
ঘটনাস্থল নদীয়ার হাঁসখালি থানার ছোটচুপুরিয়া গ্রাম। প্রাথমিক অনুমান, বোমারু বিমান থেকে ছোড়া বোমাই হতে পারে। জেলা পুলিশ সুপার সন্তোষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, “হতে পারে বোমা দু’টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এরোপ্লেন থেকে ফেলা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর বম্ব স্কোয়াডের লোকজন দেখে গিয়েছে। দেখা যাক, ওরা কী বলে। বোমা দু’টি এখন মাটি চাপা দিয়ে রাখা আছে। সারাক্ষণ পুলিশ পাহারা রয়েছে।”

বোমা দু’টির সিলিন্ডারের গায়ে কিছু লেখা থাকলেও তা অস্পষ্ট। তবে অনেকেরই অনুমান বোমা দু’টি সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের হবে। হয়তো ছোড়া হয়েছিল, কিন্তু ফাটেনি। এত বছর ধরে মাটির নিচে চাপা থাকায় বোমা দু’টি এখনও সক্রিয় কি না, তা সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছেও স্পষ্ট নয়।

এদিন সেনাবাহিনীর বম্ব স্কোয়াডের লোকজন বোমা দু’টি খতিয়ে দেখে গেলেও তাঁরা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। শুধু দেখে জানিয়ে গিয়েছেন, পরীক্ষা চলছে, পরে জানানো হবে। এই মুহূর্তে বোমা দু’টি হাঁসখালি থানা এলাকার একটা ফাঁকা জায়গায় মাটি খুড়ে পুঁতে রাখা রয়েছে। ওপরে বালি চাপা দেওয়া হয়েছে। তার ওপর রাখা রয়েছে বালির বস্তা। ওই এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে। আশেপাশে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাখা রয়েছে চূড়ান্ত নজরদারি।

জানা গিয়েছে, ছোটচুপুরিয়া গ্রামে প্রায় আড়াই কাঠা একটি পুরনো পুকুর সংস্কারের কাজ চলছিল। সংস্কারের কাজের সময় শনিবার জেসিবি মেশিনের চালক সোম মল্লিকের গাড়িতে একটা শক্ত কিছু বাধে। অথচ কাউকে কিছু না বলে সে পরদিন ফের মাটি কাটতে থাকে। রবিবার বিকেলে মাটি কাটার সময় মেশিনে বাধে দু’টি সিলিন্ডার।

পুলিশ সূত্রে খবর, গুপ্তধন মনে করে কাদামাখা সিলিন্ডার দু’টি বাড়ি নিয়ে যায় মেশিন চালক। বাড়িতে গিয়ে মাটি ধুয়ে ফেলতেই তার কাছে সিলিন্ডার দু’টি অন্য জাতীয় কিছু বলে সন্দেহ হয়। ততক্ষণে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় গ্রামের লোকজনের মধ্যেও। খবর যায় হাঁসখালি থানার পুলিশের কাছে।

পুলিশ গিয়ে মিসাইল বোমার মতো দেখতে খুবই সাবধানে তা উদ্ধার করে নিয়ে আসে থানায়। এরপর অতি সাবধানে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয় বোমা দু’টি। সেগুলি আদৌ এখনও সক্রিয় কী না, তা নিয়ে পুলিশ কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। কখন কী হয়, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না পুলিশকর্মীদের।
যে পুকুরের মাটি কাটতে গিয়ে বোমা দু’টি মিলেছে, সেই পুকুরটি বোমাপুকুর নামেই খ্যাত। তাই সেই পুকুরে এমন বোমা মেলায় প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে।

পুকুর সংস্কারের জন্য সোমবার ফের মাটি খোঁড়া শুরু হলে তড়িঘড়ি তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামের মানুষের ধারণা, বোমা দু’টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের হতে পারে। তবে তা এখনই নিশ্চিত নয়। তাঁদের আরও ধারণা ওই পুকুরে আরও এমন বোমা থাকতে পারে।

জেসিবি মেশিন চালক সোম মল্লিকের বক্তব্য, “মেশিন চালানোর সময় শক্ত কিছু একটা বাধে। কী জিনিস বুঝতে না পেরে বাড়ি নিয়ে যাই। পরে সিলিন্ডার জাতীয় জিনিস দেখে ভয় লাগে। পুলিশ ওই দু’টি বোমা নিয়ে গিয়েছে।” জমির মালিক আনিসুর রহমান জানান, “শুনলাম, ওগুলি বোমা। তবে এত বড় বোমা হয় ধারণা ছিল না।” সূত্র: কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন।

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন