২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ফোনে ফোনেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০৯ অপরাহ্ণ, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, আমার বাড়ি চল্লিশ কাহনিয়া এলাকায়। ওখানকার জেলেরা আমাকে ডিমওয়ালা ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪শ টাকা দরে দেবে বলে ফোন করেছিল। আমি তাদের কথায় সাড়া দেই নাই। আইনজীবী হয়ে লোভে পড়ে আইন অমান্য করার পক্ষে নন বলেও জানান তিনি।

কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, ভোররাতে জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরতে নামে। সকাল হওয়ার আগেই আবার তারা তীরে উঠে আসে। ইলিশ ধরার নৌকা মূল নদীর পাশের ছোট খালে নিয়ে রেখে সেখানে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ব্যাগে অথবা বিভিন্ন কার্টুনে করে অগ্রীম বুকিং দেয়া ক্রেতাদের কাছে সুযোগ বুঝে পৌঁছে দেয় সেসব মাছ।

খোঁজ নিয়ে সত্যতাও মিলেছে ওই আইনজীবীর এসব কথার। জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঝালকাঠির নলছিটিতে চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে চলছে মা ইলিশ ধরা। স্থানীয় শতাধিক জেলে প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরছেন। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়।

উপজেলার সুগন্ধা নদীর সরই, মাটিভাঙ্গা, ফেরিঘাট, নাইয়াপাড়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, দপদপিয়া পুরাতন ফেরিঘাট ও বিষখালী নদীর ভেরনবাড়িয়া, নলবুনিয়া, ভবানীপুর এলাকায় শত শত জেলে এসব মাছ ধরছেন বলে জানা গেছে।

সরকারিভাবে ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে না যেতেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলকায় কয়েক মণ ইলিশ শিকার করে কৌশলে বিক্রি করছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জেলেরা তা অমান্য করে ইলিশ ধরছে। সকাল ১০টায়, দুপুর ৩টায়, রাত ১০টায় ও ভোর ৪টায় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে এ মা ইলিশ নিধন করছে তারা।

তারা আরও জানান, জেলার রাজাপুরের চল্লিশ কাহনিয়া ও বাদুরতলা এলাকায় ভোরে মা ইলিশ ধরে জেলেরা। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগ রাতে অভিযান চালিয়ে ভোরে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই ইলিশ ধরতে নামেন জেলেরা।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ভৈরবপাশা এলাকায় সুগন্ধা নদী সংলগ্ন একটি খাল থেকে নৌকা ও জালসহ তিন জেলেকে আটক করে মৎস্য কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। পরে তাদেরকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের বরাদ্দ কম এবং একটি মাত্র ট্রলার রয়েছে। জনবলও কম, তা দিয়ে অভিযান চালানো কষ্টসাধ্য।

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। ইতিমধ্যে জেলায় ১০ জনের বেশি জেলেকে অভিযানে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছি।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো জেলেকে ইলিশ ধরতে দেখলে তাকে কোনো রকম ছাড় দেয়া হয়নি, আর হবেও না।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন