২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশালটাইমসে সংবাদ প্রকাশ : এসআই ও কনস্টেবল ক্লোজড

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, ১২ জুলাই ২০১৮

বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপায়ন বড়াল ও কনস্টেবল বকশী সুশান্তকে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে ক্লোজড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) রাতে তাদেরকে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এই বিষয়টি রাত ১০টার দিকে বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন মামুন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- এসআই দিপায়ন বড়াল একটি মামলার আসামিদের কাছে ঘুষ দাবি করেন। ওই ঘুষ বাণিজ্যের রফাদফার মধ্যস্তততা করেছেন কনস্টেবল সুষান্ত। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- ওই মামলাটির চার্জশিট আদালতে জমা দেয়ার পরও অভিযুক্তদের কাছে ঘুষ দাবি করা হচ্ছিল। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বরিশালটাইমস’ বরিশালে এসআই ও কনস্টেবলের ঘুষ বাণিজ্যের ভিডিওচিত্র ফাঁস শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে বরিশাল পুলিশের শুরু হয় তোলপাড় (!)

ওই ভিডিওচিত্রে প্রকাশ- গত বুধবার (১১ জুলাই) বরিশাল শহরের একটি রেস্তোরাঁয় বকশি সুশান্ত ১২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করছেন। যদিও দাবির ১২ হাজার টাকার ১০ হাজার টাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দিপায়ন বড়াল হস্তগত করতে চেয়েছিল। অবশ্য এই বিষয়ে শহরের কোন এক জায়গা থেকে ফোন করে বকশীকে দিক নির্দেশনাও দিচ্ছিলেন দিপায়ন। কিন্তু আদালতে চার্জশিট দেয়ার পরে পুলিশ বদলাতে পারে কিনা বা সেখান আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার কোন ক্ষমতা রাখে কিনা এই সন্দেহে ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন অভিযুক্ত মাওলানা কামাল হোসেন। এই রফাদফার ভিডিও ছাড়াও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দিপায়ন টাকা দাবি করার একটি অডিও প্রকাশ পায়। ভিডিও অডিওর দুটি ক্লিপ এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। অবশ্য এই ঘটনায় চার্জশিটে অভিযুক্ত মাওলানা কামাল হোসেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর এসআই ও বকশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দাবি করেছিলেন।

অভিযোগকারী বরিশাল শহরের সাগরদী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, একই এলাকার ইব্রাহিম মানিক ওঁঝা চলতি বছরের ২৮ মার্চ বরিশাল আদালতে তাকেসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ৩৮৫/৩৮৭/৩২৩/৩২৪/৩০৭ ও ১৪৩ সহ ৭টি ধারায় সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতয়ালি পুলিশের ওসিকে এজাহারভুক্ত করার আদেশ দেন। পরবর্তীতে থানা থেকে এই মামলাটির তদন্তভার এসআই দিপায়নকে দেয়া হলে শুরু হয় নাটকীয়তা। এই কর্মকর্তা সাম্প্রতিকালে অভিযুক্ত কামামল হোসেনকে জানিয়ে দেন আদালতে তাদের অভিযুক্তকরে চার্জশিট দেয়ার বিষয়টি। কিন্তু তিনি এই বিষয়টিকে পুঁজি করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেয়ার সংকল্প নেন। যেখানে মধ্যস্তততাকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ওই থানার বকশী সুশান্তকে।

মূলত এসআই দিপায়নের দিকনির্দেশনা পেয়েই সুশান্ত গত বুধবার (১১ জুলাই) চার্জশিটে অভিযুক্ত কামাল হোসেনকে নিয়ে নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার কুটুম বাড়ি রেস্তোরাঁয় সমঝোতা বৈঠকে বসেন। এই পুরো বিষয়টি বাইরে থেকে কোন ব্যক্তি বিশেষ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করেন।

ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- অভিযুক্তের সাথে আলাপচারিতার প্রাক্কালে বকশী সুশান্ত এসআই দিপায়নকে প্রতিটি মুহূর্তের আপডেট জানিয়ে দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মামলাটির ধারা কমিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বকশী জনপ্রতি নিজের জন্য ২ হাজার ও এসআই দিপায়নের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। অর্থাৎ এই ঘটনায় ৬ অভিযুক্তের কাছ থেকে ৭২ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। এমনকি বাকি ৫ অভিযুক্তকে এসআই দিপায়নের সাথে সরাসরি দেখা করার পরামর্শ দেন সুশান্ত।

এই পুরো বিষয়টি বকশী স্বীকার করেছেন। তবে তার চাকুরি চলে যাওয়ার শঙ্কা জানিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার অনুরোধ রাখেন।

কিন্তু পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে এসআই দিপায়ন বলেছিলেন- অপরাধ করলে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার বিরুদ্ধে যে শাস্তি দিবেন তা মেনে নিবেন। অবশ্য এমনটিই হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান তাদেরকে থানা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন