১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালবাসীর স্বপ্নের ‘পদ্মাসেতু’র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ১২ আগস্ট ২০১৭

পদ্মার ওপর ক্রমশ সেতুর ভিত মাথা উঁচু হয়ে উঠছে। ৩৭ নম্বর পিলারের তিন ধাপের কংক্রিটিংয়ের এক ধাপ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আর ৩৮ নম্বর পিলারের প্রথম ধাপের কংক্রিটিং হবে আজ শনিবার। ৩৯ নম্বর পিলারের জন্য বেজ ঢালাইয়ের কাজ চলছে।

এ পিলারের বেজের এক লেয়ারের কংক্রিটিং হয়েছে। আরেক লেয়ারের কংক্রিটিং হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। এভাবেই দৃশ্যমান হতে যাচ্ছেÑ পদ্মাসেতুর পিলারগুলো। তাই সেতু দৃশ্যমানের খুব কাছে এখন। পদ্মার গভীরে আসন গেড়ে পাইল এখন রূপ নিয়েছে পিলারে। পদ্মার ওপরে উঠে দাঁড়িয়েছে কাঠামো।

সেপ্টেম্বরেই এ পিলারের ওপর সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) বসানোর জন্য সব প্রস্তুতি চলছে। খুঁটি উঠে গেলেই বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ভাসমান ক্রেন (৩৬শ’ টন ক্ষমতার) স্প্যান এনে বসিয়ে দেবে পিলারের ওপরে। যাতে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মায় ১৫০ মিটার পরপর ৪২টি পিলারে ভর করবে পদ্মা সেতুর। নদীর ভেতরে থাকা ৪০টি পিলারের ৬টি করে ২৪০টি পাইল বসবে। এর মধ্যে ৬৭টি পাইল বসেছে। আর জাজিরা প্রান্তের পিলারটির (৪২ নম্বর পিলার) ১৬টি পাইলই সম্পন্ন বসে গেছে।

তবে মাওয়া প্রান্তের পিলারটির (১ নম্বর পিলার) ডিজাইন চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনও কাজ শুরু হয়নি। মূল সেতুর ৮৩টি পাইল এ পর্যন্ত স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে ৬৫ পাইল।

২৪শ’ কিলোজুলের প্রথম হ্যামারটিই এখনও একাই পাইল ড্রাইভ করে চলেছে। মাওয়া প্রান্তের ১৪ নম্বর পিলারের পাইল বসিয়ে আবার এখন এসেছে ৪১ নম্বরে। এ পিলারের একটি নতুন পাইল বসানো এবং আগে বসিয়ে রাখা ৪টি পাইলে বাকি অংশের কাজ করছে।

এ হ্যামারটির সঙ্গে আরও দুটি হ্যামার (২ হাজার কিলোজুল এবং ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতা) এলেও সঙ্গ দিতে পারেনি। পরে আছে অচল হয়ে। এতে পাইল স্থাপনে যথাযথ গতি আসছে না। তাই অচল হ্যামারগুলো সচলের চেষ্টার পাশপাশি নতুন করে হ্যামার আনা হচ্ছে।

সাড়ে ১৯শ’ কিলোজুল ক্ষমতার জার্মানি হ্যামারটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে। এটি ৭ আগস্ট মংলায় পৌঁছায়। পরে মংলা থেকে মাওয়া আসছে বার্জে করে। শুক্রবার এ রিপোর্ট লেখার সময় হ্যামার বহনকারী বার্জটি ভোলা অতিক্রম করে চাঁদপুরের দিকে আসছিল।

গত বুধবার সকালে মংলা থেকে রওনা হ্যামারবাহী এ বার্জ ১৩ আগস্ট মাওয়ায় পৌঁছবে। এরপর ২০ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। এছাড়া জার্মানিতে সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার আরেকটি নতুন হ্যামারের তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি নবেম্বরে মাওয়া আসার কথা রয়েছে।

এদিকে মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) কাজ শুরু হয়নি। ১ আগস্ট সিডিউল চূড়ান্ত করা হলেও যন্ত্রপাতি না পৌঁছানোর কারণে তা পিছিয়ে দিতে হয়েছে ১৫ আগস্ট। কিন্তু এ দিনও শুরু করা যাচ্ছে না। কাস্টমস্ জটিলতার কারণে এ কাজের ডিলিং রিলিং রিগের কিছু পার্স এখনও মংলায় রয়ে গেছে। এ কাজে যন্ত্রপাতি ছিল ৬টি কন্টেনার। এর মধ্যে ৪টি কন্টেনার খালাস হয়েছে।

বাকি ২টি কন্টেনার এখনও মাওয়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই সেতু কর্তৃপক্ষ মংলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাকি দুটি কন্টেনার দ্রুত মাওয়ায় পৌঁছাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাগণ সাংবাদিকদের শুক্রবার জানিয়েছেন। তবে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এ ভায়াডাক্টের ১৯৩টি পাইলের মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ১৫০টি পাইলই বসে গেছে।

চীন থেকে সমুদ্রপথে রওনা হওয়া ১০ নম্বর স্প্যান শীঘ্রই মাওয়ায় পৌঁছবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। আমাজনের পর সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। এর উত্তাল ঢেউকে বশ মানিয়েই সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করেই এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর মহাযজ্ঞ।

এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসটি পদ্মাসেতুর জন্য নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে স্প্যান বসিয়ে দৃশ্যমান করা ছাড়াও নানা সফলতা আসছে বলে দায়িত্বশীলরা জানান। কারণ হিসেবে জানান, এ মাসেই প্রবল চ্যালেঞ্জে থাকা বাকি ১৪টি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সরেজমিন বিশেষঞ্জ প্যানেলের সভা রয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির এ বীরত্বগাঁথা স্বপ্ন বাস্তবায়নের আরেক ধাপ এগিয়ে নেবে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত সোমবার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ চ্যানেল পরিদর্শন করতে এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ দেখেছেন স্বচোক্ষে। এ সময় তিনি বলেছেন, পদ্মাসেতুর ব্যয়ভার আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এটি নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

তাই এ ব্যয়ভার বাড়ার কথা নয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, পদ্মাসেতুর কাজের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষের পথে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা সাংবাদিকদের এ রকম প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তার ভাল জানা নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতুর জন্য তিন বিলিয়ন ডলার আমরা দিতে পারব কিনা তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন। এখন এ ব্যয় ৪ বিলিয়নেরও বেশি দাঁড়িয়েছে। এবং এ অর্থ বাংলাদেশের জন্য কোন ব্যাপারই নয়।”

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন