২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালের তরুণীকে সৌদিতে বিক্রি!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, ১২ জুলাই ২০১৮

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা শ্রাবনী নামের এক নারীকে বিক্রয় করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনাল‘র মাধ্যমে সৌদি আরব যান এই নারী গৃহকর্মী। সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ বাংলাদেশে বসে হানিফ চৌধুরী ও জহির নামের দালালদের মাধ্যমে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে দরিদ্র নারীদের সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে বিক্রয়ের আভিযোগ তুলেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের সুশান্ত সরকারের স্ত্রী সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা শ্রাবনী গাইন।

সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা শ্রাবনী গাইন জানান, সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ বাংলাদেশে বসে হানিফ চৌধুরী ও জহির নামের দালালদের মাধ্যমে গত ১লা জুন রাতে সৌদি আরব যান। সেখানে হোসাইন নামের এক লোক তাকে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে তার স্ত্রী সাহেদা ও ৮ মাসের শিশু সন্তান খালেদ বসবাস করেন। দু’দিন ভালোই কাটে তৃতীয় দিন থেকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকে হোসাইন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত মাধর করতে শুরু করে ও খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মাঝে মধ্যে দিনে এক বেলা খাবার দিতেন আবার কোন দিন দিতেন না। এভাবে চলে ১৬ জুন প্রর্যন্ত। সৌদি আরবে ঈদের দিন (১৬ জুন) তার বন্ধু বান্ধব আসবে তাদের সাথে খারাপ কাজ করতে হবে। না মানায় আমাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং বলে তোকে ১২ লাখ রিয়াল দিয়ে কিনেছি।

এক সময় চাবুকের মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিললে আমাকে ওই বাড়ির তৃতীয় তালায় একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে সেখানে আরও ১৬ জন বাংলাদেশী নারী ছিল। ওইখানে বসে বাংলাদেশে আমার স্বামী সুশান্ত সরকারকে ফোন করে সব কিছু জানাই। সে আমাকে জানায় যেভাবে হোক ওইখান থেকে পালিয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে দেশে ফেরার কথা বলে। রাতে তাদের সাথে কথা বলে ১৭ তারিখ ওখানে থাকা রেশমা নামের এক মেয়েকে জানালায় রশি বেধে নিচে নামিয়ে পুলিশ পুলিশ বলে ডাক-চিৎকার করতে বলি সে রাস্তা দিয়ে পুলিশ পুলিশ বলে ডাক-চিৎকার করে। আমরাও তৃতীয় তলায় বসে ডাক-চিৎকার করি। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

হোসাইন ১৯ তারিখে বিকাল ৩টার দিকে সৌদি আরবের থানা থেকে আমাকে ছাড়িয়ে রিয়াদে আবু মোহাম্মাদের বাসায় দেয়ার কথা বলে রিয়াদের বিমানে উঠিয়ে দেয় সেখানে বাংলাদেশি শাহজাহান নামের এক লোক তাকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আবু আব্দুল্লাহ (রিয়াদ) ও তার স্ত্রী আরবি নামের দু’জন এসে বাংলাদেশের অফিসে নেয়ার কথা মেলাজ নামক জায়গায় তার বাসায় নিয়ে যায়। ওই খানে গিয়েও বিপাকে পরতে হয়। রিয়াদ নামের ওই লোক প্রতিদিন মারধর করে ভয়-ভিতি দেখিয়ে দেহ ব্যাবসা করানোর চেষ্টা করে।

দেহ ব্যাবসা না করলে তাকে দশ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এদিকে আমার স্বামী টাকায় গিয়ে সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ ও বাংলাদেশের দালাল হানিফ চৌধুরী ও জহির কাছে যায় এবং আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলে। সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ ও বাংলাদেশের দালাল হানিফ চৌধুরী ও জহির আমার স্বামীর কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে ৯০ হাজার টাকার তারা রাজি হয়। ২৮ জুন বিকালে ৯০ হাজার টাকা প্রদান করলে ২ জুলাই সকাল ৬টার সৌদি আরব থেকে বিমানে তুলে দেয়। দুপুর ১টায় এসে ভারতের দিল্লিতে আসি।

ওইখানে এক রাত থাকার পরে ৩জুলাই সকাল ১০:৩৫ মিনিটের বিমানে এসে বাংলাদেশে দুপুর ১:৪৫ মিনিটের সময় বাংলাদেশ এয়ার্পোটে পৌছায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশী দালাল হানিফ চৌধুরির কাছে (০১৭৮৬৫৪৩৭৮৮৪) ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রাবনীর স্বামীর সাথে সমাধান হয়েছে। তিনি আমাদের ৯০হাজার টাকা দিয়েছেন আমরা তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।

আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনাল’র মালিক সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ এ কাছে (০১৬১৬১৬০০৭৯) ফোনে জানতে চাইলে তার সহকারী মাসুম বিল্লা জানান, স্যারে অছিসে নাই, কখন আসবে বলা যায় না। এ ব্যাপারে অফিসে এসে কথা বলেন। বাংলাদেশী দালাল জহিরের কাছে (০১৭৪৭৭১১৭৩৫) কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নাই।’’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন