২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালের ভুয়া এমপিকে ১০ লাখ টাকায় ‘ভাড়া করে’ মুন্নু সিরামিক!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৫৮ অপরাহ্ণ, ১৭ মে ২০১৮

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরা পড়া বাবুল সরদার চাখারীকে ১০ লাখ টাকায় ‘ভাড়া করে’ সিরামিক কোম্পানি মুন্নু সিরামিক। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎবিল বকেয়া রয়েছে। বাবুলকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে- এই বিল মওকুফ করিয়ে দেবেন বলে বাবুলের সঙ্গে ১০ লাখ টাকায় ‘চুক্তি’ হয়েছিল মুন্নু সিরামিকের।

প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন মানিকগঞ্জের প্রয়াত বিএনপি নেতা হারুনার রশীদ খান মুন্নু। গত বছর তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন তার মেয়ে মানিকগঞ্জ বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা। তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাবার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন রিতা। গত এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর ৩৬ টাকা থেকে ১৬২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে শুরুর চেষ্টায় মুন্নু সিরামিক বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বদলে মওকুফ করানোর চেষ্টা চালায় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন বাবুল।

বুধবার বাবুল চাখারী নিজেকে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস পরিচয় দিয়ে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের (আরইবি) চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন কাছে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি মুন্নু সিরামিকের পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩০ টাকার বকেয়া বিল মওকুফের সুপারিশ করেন।

বিষয়টি নিয়ে আরইবি চেয়ারম্যানের সন্দেহ হলে তিনি ফোনে তালুকদার ইউনুসের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তার পরামর্শেই খিলক্ষেত থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে নিয়ে যায় বাবুল চাখারীকে।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, বাবুলকে বৃহস্পতিবার (১৭ মে) আদালতে তুলে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছিলেন তারা। কিন্তু বিচারক সে আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

বাবুলের কাছ থেকে কী জানা গেছে- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ জন্য ১০ লক্ষ টাকা চুক্তি করেছিল ওই কোম্পানির সাথে।’

‘সে (বাবুল) পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যানের রুমে প্রবেশের সময় গায়ে মুজিব কোর্ট পরিহিত ছিল।’

মুন্নু সিরামিকের বক্তব্য জানতে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে কোম্পানিতে যোগাযোগ করা হলে একজন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না।’

ওই কর্মকর্তা একটি টেলিফোন নাম্বার দিয়ে বলেন সেখানে যোগাযোগ করতে। সেই নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেননি।

‘প্রতারণাই বাবুলের কৌশল’

বাবুল চাখারীর পরিচিত রবিন নামে এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাবুলের কাজই ছিল প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায়।

শিকার বাবুল সরদার চাখারীর আরও নানা প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশও বলছে, বাবুল নানা সময় সংসদ সদস্যের পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন।

এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাবুলের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি ১৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন। চার বছর আদালত নির্দেশ দিলেও সে টাকা তিনি ফেরত দেননি।

রবিন নামে ওই ব্যবসায়ী জানান, তার জানামতে আর মতেই আরও অন্তত ১৫ জন বাবুলের প্রতারণার শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ঢাকাটাইমসকে রবিন বলেন, ‘বাবুলের সাথে একটা ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমার ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। এরপর আমি আদালতের জালিয়াতির মামলা করি। ঢাকা জেলা জজ কোর্ট ২০১৩ সালের মাঝামাঝি আমার পক্ষে রায় দেয়।’

‘রায়ে আমার ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশের পাশাপাশি বাবুলকে চার মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই রায়ের পর থেকেই সে পলাতক।’

‘শুধু আমি না, তার দ্বারা আরো ১৫ জন প্রতারিত হয়েছে বলে পরে জানতে পেরেছি। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের পিয়ন পদে চাকরি করলেও বিভিন্ন সময় নিজেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করতেন।’

বাবুল চাখারী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের মাদারকাঠি গ্রামে তার বাড়ি।

বাবুল এর আগে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। নানা প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসার পর তাকে বহিষ্কার করা হয় ওই দল থেকে। এরপর তিনি প্রয়াত নেতা শেখ শওকত হোসেন নীলুর এনপিপিতে যোগ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলে যোগ দেন।

গত বছরের ৭ মে মারা গেছেন নীলু। তার আগেই তিনি ২০ দল ছেড়ে যান। অবশ্য এরপর নীলুর দলের একাংশ একই নামে ২০ দলে রয়ে যায়।

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন