১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালে ক্ষুধা মেটাতে বিত্তশালী গোষ্ঠীর নদী দখল!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, ১০ অক্টোবর ২০১৭

আইন প্রয়োগে অনীহা এবং দখলকারীদের আইনের আওতায় আনতে না পারাই নদী-জলাধার, বন-পাহাড় ধ্বংসের জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন আলোচকরা। তারা বলেন, দরিদ্র কোনো মানুষ নদী, বন, পাহাড় দখল করছে না, বিত্তশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের ক্ষুধা মেটাতে এসব দখল করছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।

পানি অধিকার ফোরাম এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) আয়োজনে এবং ইন্টারন্যাশনাল ল্যান্ড কোয়ালিশনের (আইএলসি) সহযোগিতায় আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার নেত্রী ও নিজেরা করি-এর সমন্বয়কারী খুশী কবির। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।

এছাড়া যশোর অঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকার গণমানুষের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন যশোরের ভবদহ কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মোতালেব সরদার। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী দখল ও দূষণের অভিজ্ঞতাভিত্তিক অপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বরিশালের রিচ টু আনরিচের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে খুশি কবির বলেন- আদালতের রায় পাওয়া গেলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নদী-জলাধার, হাওর, বন, পাহাড় সুরক্ষায় সংগঠিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শাহজাহান বলেন, দখল-দূষণের পরিবেশ এখন সর্বত্র।

তিনি বলেন, আমাদের বড় ধরনের সুশাসনের অভাব আছে। আর এজন্যই নদী-ভূমি দখল হচ্ছে। পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে নদী রক্ষায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যারিক্যুলামেরও পরিবর্তন আনতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর হতে হবে। বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দরিদ্র মানুষ নদী, বন, পাহাড় দখল করছে না, বিত্তশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের ক্ষুধা মেটাতে এসব দখল করছে। আমাদের মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে দেশ গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না, সে দেশ কীভাবে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে।

আদালতের নির্দেশে একটা ভবন অবৈধ হয়ে যাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে আছে। সরকার পূর্বাচল আবাসন তৈরি করেছে শীতলক্ষা নদী দখল করে। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক তার উপস্থাপনায় নদী ও জলাভূমির মৃত্যুর জন্য প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহ পথ পরিবর্তন ও উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে অপ্রাকৃতিকভাবে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণ, বর্জ্য নিক্ষেপ, ভরাট-দখল, ইত্যাদিকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। যশোরের ভবদহ কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মোতালেব সরদার বলেন, পোল্ডার নির্মাণের ফলে ২৫টি নদীর পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এবং ৯টি নদীর পথ আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ৫টি নদী সম্পূর্ণভাবে মরে গেছে।

এখানে মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। উপকূলীয় বাঁধ এবং রেগুলেটর বসিয়ে এ অঞ্চলকে নদীশূন্য করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বরিশালের নদ-নদীর দখল-দূষণের চিত্র তুলে ধরে মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে দখলের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ওষুধ শিল্প-কারখানাগুলোর ইটিপি থাকা সত্ত্বেও স্যান্ড ও কার্বন ফিল্টার ব্যবহার করে ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি এসব বর্জ্য খাল ও নদীতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া আলোচনায় ইনসিডিন-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।’’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন