১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের দ্বিমুখি আচরণে ক্ষুব্ধ মোটরআরোহীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:১২ অপরাহ্ণ, ১৪ জুলাই ২০১৮

বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের বিতর্ক যেন কমছেই না। বরং দিনে দিনে এই বিতর্ক ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিকালে মোটরসাইকেলে একপেশে ধারাবাহিক অভিযান ট্রাফিক পুলিশকে ঢের বিতর্কে ফেলেছে। মোটরসাইকেলগুলোতে আরোহী নিলে জরিমানা অথচ বিআরটিএর আইনে থ্রি-হুইলার যানবাহনে যাত্রী নেয়ার ক্ষেত্রে সিমাবদ্ধতা থাকলেও মানছে না। ফলে এই সব যানবাহনে ৩ থেকে ৪ জন বহনের নির্দেশনা থাকলেও সেখানে ৮ থেকে ১০ জন পরিবহন করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশে এমন দ্বিমুখী আচরণে রীতিমত ওষ্ঠাগত মোটরসাইকেল আরোহী বা চালকরা আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে। এমতাবস্থায় অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক পুলিশকে থ্রি-হুইলার যানবাহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো মাসিক হারে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে এমন সুবিধা নিচ্ছে। এই লেনদেনে ট্রাফিক পুলিশের টিআই মর্যাদার অন্তত দুই অফিসার জড়িত রয়েছেন বলে ট্রাফিক পুলিশের ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এই লেনদেনের সার্বিক আলাপ আলোচনা যানবাহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কর্যালয়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।

শ্রমিক সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে আলাপচারিতায় নিশ্চিত হওয়া গেছে- ট্রাফিক পুলিশের টিআই ওয়ান শামসুল আলমই লেনদেনের মুলে রয়েছেন। এই কর্মকর্তার ভাতিজা পচিয় দিয়ে বরিশাল আলফা মাহিন্দ্রা মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি দুলাল হোসেন তালুকদার সব সংগঠনগুলোকে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমঝোতা করিয়েছেন। অবশ্য মাস শেষে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিতেও মধ্যস্তততাকারী হিসেবে এই দুলালই কাজ করছেন। যে কারণে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে আইনের আওতায় থ্রি-হুইলারগুলোকে নিয়ে আসতে চাইছে না ট্রাফিক বিভাগ। যদিও সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দুলাল বলেন টিআই শামসুর আলম আমার গ্রামের বাড়ির পাশের বাড়ির চাচা হয় এটি সত্য। ট্রাফিক পুলিশের সামনে থেকেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মাহেন্দ্রা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- পুলিশ প্রতিনিয়ত ২০ থেকে ৩০ টি গাড়ি নেয় রিকুজিশনে, যার কারণেই তারা মাহেন্দ্রা গাড়িগুলোকে একটু ছাড় দেয়।

অবশ্য সরেজমিনে মোটরসাইকেলগুলোকে ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা করতে দেখা গেলেও একই স্থান থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে থ্রি-হুইলার যানবাহনগুলো দেদারছে শহর দাবড়াচ্ছে। কোন ট্রাফিক পুলিশকে জরিমানা আদায় করতে দেখা যাচ্ছে না। যদিও এই বিষয়ে কোন সদুত্তোর নেই মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের কাছে। বৃহস্পতিবার এমনই একটি চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে শহরের ফকির বাড়ি রোড সম্মুখ সদর রোডে। পুলিশের এমন আচরণে ঘটনাচক্রে শহরে ট্রাফিক মোটরসাইকেল আরোহীদের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতির মত ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় একাধিক মোটরসাইকেল আরোহীর অভিযোগ হচ্ছে- ট্রাফিক পুলিশের একপেশে আচরণে অনেকেই সংক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ যে থ্রি-হুইলার যানবাহনকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে মাস অন্তর অর্থ নিচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

একাধিক মোটরসাইকেল আরোহী এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন- শহরে একের অধিক আরোহী নিয়ে চললে পুলিশ প্রায়শই বাগরা বসায়। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ মামলা বা জারিমানা দিয়েও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বরিশাল শহরে মোটরসাইকেল পরিবহনে বেগ পেতে হচ্ছে। অথচ থ্রি-হুইলার যানবাহনগুলো তিনজন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বা বিআরটিএর আইনে বহনের অনুমতি থাকলেও সেখানে ৮ থেকে ১০ জন নিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে এমন চিত্র প্রতীয়মান হচ্ছে মেট্রোপলিটন এলাকাজুড়ে।

এমন বাস্তবতায় ট্রাফিক পুলিশের ভেতরের একটি সূত্রও নিশ্চিত করেছে- এই টিআই শামসুল আলমই থ্রি-হুইলার মালিক বা শ্রমিকদের সাথে রফদফা করেন। তবে পুরো অভিযোগ অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেছেন- আপনার সাথে এত কথা বলার সময় আমার নেই অফিসে আসেন তার পরে আপনার সাথে কথা বলি। দেখি আপনি কি বলতে চান।

অথচ নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন মাহেন্দ্রা মালিক জানালেন- সংগঠনের নেতারা তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫ শ টাকা ট্রাফিককে দিতে নিচ্ছেন। এমনি ভাবে বিভিন্ন সংগঠনের অন্তত বৈধ অবৈধ ৩ হাজারেরও বেশি মহিন্দ্রা থেকে টাকা তুলছেন নেতারা। পরবর্তীতে এই টাকা সমূলে দুলাল তালুকদারের মাধ্যমে টিআই শামসুল আলমের হাতে পৌছে যাচ্ছে। অবশ্য এই লেনদেনের পূর্বেকার সময়ে টিআই শামসুল আলমের ভাষ্য হচ্ছে- উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পালের নির্দেশনার আলোকে সমঝোতায় যেতে হয়েছে। মাস শেষে উত্তেলিত অর্থের বড় একটি অংশ খোদ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটেও চলে যাচ্ছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে- ভুক্তোভোগী কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন- বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরবর্তীতে তদন্ত করে অবশ্যই দেখবেন।

কিন্তু সকল অভিযোগ অস্বীকার বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের ডিসি উত্তম কুমার পালের বলেন, আমাদের কাছে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের ভেতরকার সূত্র যে তথ্য উপাত্ত দিয়েছে তাতে রিতিমত হকচকিয়ে যাওয়ার জোগার। যদিও এ সংক্রান্ত পতিবেদন নিয়ে আগামীতে আরও একটি প্রতিবেদন পড়তে অপেক্ষা করুন।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন