২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সিটিতে তিন প্রার্থীকে নিয়ে আ’লীগ বিএনপিতে টেনশন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৭ অপরাহ্ণ, ২০ জুলাই ২০১৮

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারেন তিন প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপির জন্য অস্বস্তি হতে পারেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান। তিনি হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। আর আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন ও বাসদের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী। ইকবালের প্রতীক লাঙ্গল এবং মনীষার প্রতীক মই। অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা তা মনে করেন না।

বিএনপির শক্ত অবস্থান হিসেবে পরিচিত বরিশালে ইসলামী আন্দোলনও কম শক্তিশালী নয়। ২০০৮ সালে বরিশাল সদরে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ ফায়জুল করীম প্রায় ২৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করীমের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইয়ে। এ জন্য বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ভোটের মাঠে দলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মনে করেন- গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় হয়েছে। বরিশালেও তাঁরা ভালো ভোট পাবেন বলে আশা করছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে- ইসলামী আন্দোলন যে ভোট টানবে, তা মূলত যেত বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে। এ কারণে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন।

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হামিদী সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে কাজ করছি। আমাদের ৪০ হাজারের বেশি নিজস্ব ভোট আছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয় দলেই আমাদের পীর সাহেবের মুরিদ আছেন। নগরের আলেম-ওলামা, ইমাম-মুয়াজ্জিন সবাই এক হয়ে কাজ করছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের প্রার্থী জয়ী হবেন।’

মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক অবশ্য এমনটা মনে করেন না। তাঁর মতে- দেশের রাজনীতিতে এখন চরম ক্রান্তিকাল চলছে। এ জন্য ইসলামি ও জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষ এখন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চিন্তার জায়গা থেকে বিএনপির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তাই এই নির্বাচনে বিএনপির ভোট ভাগাভাগির কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে তাঁদের কোনো অস্বস্তিও নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা গেলে বিএনপির জয় নিশ্চিত।

অস্বস্তি তৈরি করতে পারেন ইকবাল ও মনীষাও

সরকারের অংশ হওয়ায় জাপার নেতা-কর্মীরা হয়রানির মধ্যে নেই। এটিকে সুবিধা হিসেবে নিচ্ছেন জাপার প্রার্থী ইকবাল। তরুণ এই প্রার্থী সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরে আধুনিক বরিশাল গড়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে ভোট চাচ্ছেন। জাপার নেতারা মনে করছেন, তাঁদের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরই ভোট টানবেন। কারণ, জোট হিসেবে ভোট করলে এই ভোট আওয়ামী লীগের প্রার্থীই পেতেন। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিবিয়াত সাদিক আবদুল্লাহর জন্য লাঙ্গল অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠার সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাংগঠনিক অবস্থা বরিশালে তেমন ভালো নয়। তবে এই দলের মনোনীত প্রার্থী চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী সম্প্রতি বরিশালের বস্তি, শ্রমজীবী তথা প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের মধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। দরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় তিনি গরিবের ডাক্তার হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন। দরিদ্র মানুষ মাটির ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মনীষার নির্বাচনী ব্যয়ে অংশ নিয়েছেন। ভোটের রাজনীতিতে এর প্রতিফলন ঘটলে তিনি বেশ ভালো ভোট টানতে সক্ষম হবেন বলে বাসদের নেতারা মনে করছেন।

দরিদ্র ও প্রান্তিক আয়ের মানুষের ভোটের বড় অংশই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে এত দিন পরিচিত ছিল। ফলে মনীষাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অস্বস্তির কারণ হতে পারেন।

তবে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন- জাপা প্রার্থী যে ভোট পাবেন, তা আওয়ামী লীগের নয়, বরং বিএনপির। আর মনীষা চক্রবর্তী ব্যক্তি হিসেবে সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে আলোচনায় এলেও সেটা ভোটের মাঠে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

বাসদের জেলা আহ্বায়ক ইমরান হাবিব এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূলত আমরা একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ধারার মধ্যে থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এখানে কার কী ক্ষতি হবে, সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ, বাসদ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা বলতে পারি, সাধারণ মানুষের মধ্যে আমরা যে রকম আন্তরিক সাড়া পাচ্ছি, তাতে সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা জয়ী হতে পারি। কারণ, এখানে প্রায় ৩১ হাজার তরুণ-মধ্যবিত্ত ভোটার। মনীষা চক্রবর্তী এই ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছেন।’

তবে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নগরের ভোটারদের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে উন্নয়ন ইস্যু। আর এটা এখন পরিষ্কার যে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। এই ধারণা ভোটারদের মধ্যে পোক্ত হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোটে কারও ভাগ বসানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বরিশাল নগরে ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির প্রভাব সীমিত।

পাশাপাশি বাসদের প্রার্থী নানা কারণে কিছুটা পরিচিতি পেয়ে আলোচনায় আছেন। সেটা ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের জন্য কোনো প্রভাব ফেলার মতো কিছু নয়।

সৌজন্যে প্রথম আলো

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন