২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশাল সিটি নির্বাচনে থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, ০৭ জুলাই ২০১৮

সদ্য শেষ হওয়া গাজীপুর ও খুলনার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রাথমিক নিরাপত্তা ছক তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব সিটিতে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে এ তিন সিটিতে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই ইসির। নির্বাচনে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে র‌্যাব ও বিজিবি। প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা আচরণ বিধি প্রতিপালন করছে কিনা তা দেখভালে অন্যান্য নির্বাচনের মতো এ তিন সিটিতেও আনুপাতিকহারে মাঠে থাকবে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

এ ছাড়া বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড সংখ্যা বেশি থাকায় এ দুটিতে সিলেটের তুলনায় বেশি সংখ্যক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এদিকে, আগামী ১২ জুলাই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণে বৈঠকে বসছে কমিশন। ওই বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ওই বৈঠকে ইসির এসব পরিকল্পনা কার্যপত্র আকারে তুলে ধরা হবে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কমিশনের প্রাথমিক তৈরি নিরাপত্তা ছকে পরিবর্তন আসতে পারে কারণ তাদের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি জেনে মূল নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কমিশন। থাকবে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ইভিএমে ভোট। এখন পর্যন্ত কয়টি করে কেন্দ্রে এ যন্ত্রের ব্যবহার হবে তা নির্ধারণ না হলেও ন্যূনতম ৬-৮টি করে কেন্দ্রে এর ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, তিন সিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১২ জুলাই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে নতুন করে নিরাপত্তা ছকে পরিবর্তন আনা হতে পারে। কারণ সভায় নির্বাচন কমিশনাররা নিজেদের মধ্যে অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়াল সব বিষয়ে আলোচনা করবেন। এরপরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বড় কোনো সহিংসতা না হলেও ভেতর ভেতর কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনের বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম গাজীপুর নির্বাচনকে আইনানুগ বলেছেন।

এ ছাড়া গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৯টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়া ও খুলনা সিটিতে ৩টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তারা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে খুলনার ৫-৬টি ভোটকেন্দ্রের অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ দুই সিটি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরও এসব ত্রুটিবিচ্যুতির বিষয়গুলো আগামী ১২ জুলাই অনুষ্ঠেয় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি খুলনা সিটিতে অনিয়মের কারণে স্থগিত কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে শাস্তির জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ জানাতে পারে ইসি।

জানা গেছে, তিন সিটি নির্বাচনে ওয়ার্ড সংখ্যা অনুসারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। ওই আলোকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকের কার্যপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এ তিন সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রের পাহারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্ড সংখ্যা সমান থাকায় রাজশাহী ও বরিশালের জন্য একই সংখ্যক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অপরদিকে তুলনামূলক কম ওয়ার্ড থাকায় সিলেটের জন্য আনুপাতিক হারে কম সংখ্যক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে ৩০টি করে ওয়ার্ড রয়েছে।

তবে ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যার কমবেশি রয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন এবং ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৬টি। অপরদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ভোটকেন্দ্র ১২৩টি ও ভোটকক্ষ ৭৫০টি এবং ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এ দুই সিটিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ৩০টি করে মোবাইল ফোর্স ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

অপরদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ড এবং ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রে ও ৯২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এ সিটিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ২৭টি করে মোবাইল ফোর্স ও ৯টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশালের ওয়ার্ড সংখ্যা সিলেটের চেয়ে ৩টি বেশি। তবে সিলেটের ভোটকেন্দ্র ও ভোটার সংখ্যা বরিশালের চেয়ে বেশি। এ হিসাবে মোট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বরিশালের চেয়ে সিলেটে বেশি হতে পারে।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন