২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাদীকে মামলা তুলে নিতে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই’র হুমকি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১২ অপরাহ্ণ, ১১ আগস্ট ২০১৮

উৎকোচ নিয়ে মামলার প্রধান আসামীকে এজাহার থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ এনে মহিপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজের বিরুদ্ধে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের নেতা সাংবাদিক অনন্ত মুখার্জী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে শনিবার (১১ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে এ সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অনন্ত মুখার্জী দাবি করেন- টাকার বিনিময়ে পুলিশ প্রভাবশালী এক নেতার পক্ষে গিয়ে দিনের আলোর মত পরিস্কার একটি সন্ত্রাসী ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়েছে। এমনকি তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্যও। মামলা করে এখন তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মামলা পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ওই আওয়ামী লীগ নেতা। অন্যথায় সংখ্যালঘু এই নেতা আত্মহুতি দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন- সন্ত্রাসী হামলার শিকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ মামলার খরচ বাবদ বিভিন্ন সময়ে এসআই হাফিজুর রহমান কয়েক দফায় দুই লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রদানকালে অনন্ত মুখার্জী সাংবাদিকদের জানান, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এবং একজন সংবাদকর্মী হয়েও একই দলের একজন প্রভাবশালী নেতা দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।

খোঁজখর নিয়ে জানা গেছে- জমির মালিকানা দাবি করে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ধুলাসার আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিবুর রহমান মুহিবের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলযোগে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধায় কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক অনন্ত মুখাজীর মলিকানাধীন অন্যন্যা ফার্মেসীসহ ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। এসময় ওই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের মারধরের ঘটনাও ঘটে।

এমন সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে স্ব-স্ত্রীসহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহিবুর রহমান মুহিবকে। মুহিবুর রহমান মুহিবকে গ্রেফতার ও বিচারের আস্বাসে পরিস্থিতি শান্ত করেন মহিপুর থানা পুলিশ ও লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা। সন্ত্রাসী ঘটনায় ব্যবহ্নত ২৭টি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ। এ হামলায় গুরুতর আহত হয় সাংবাদিক অনন্ত মুখার্জী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাগর মোল্লা ও ভ্যান চালক হানিফ গাজী।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান- এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অনন্ত মুখার্জী বাদী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় এসআই মো. হাফিজুর রহমানকে। এ ঘটনায় জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়েও এ হামলার ঘটনায় মুহিবুর রহমান মুহিবের সম্পৃক্তার প্রমাণ মিলে।

অনন্ত মুখার্জীসহ উপস্থিত ব্যবসায়িরা সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন এস আই হাফিজুর রহমান বিবাদীর কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এজাহারভুক্ত মামলার প্রধান আসামীকে বাদ দিয়ে আদালতে সাদামাটা একটি তদন্ত রির্পোট দাখিল করেন। সেখানে কুয়াকাটায় কোন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং এ মামলা থেকে মুহিবুর রহমানকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অথচ মহিবুর রহমান যেখানে নিজেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এমনকি তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে সমঝোতা করে দেওয়ার সুপারিশ রাখেন এবং ঘটনার পর পরই মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৯০৬ নম্বর জিডিতে মুহিবের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছেন।

সেখানে তারা কিভাবে এর উল্টো রিপোর্ট দেন প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিক অনন্ত মুখার্জী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকসহ হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যা বানিয়ে দিয়েছে মহিপুর থানার এসআই হাফিজুর রহমান এনমটাই দাবি করেছেন তিনি। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা মোটরসাইকেলগুলো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের ফেরৎ দেওয়া হয়। একজন ঘুষখোর পুলিশ সদস্যকে কিভাবে জেলা পুলিশ পুরস্কারে ভূষিত করেন এমন প্রশ্ন রাখেন অনন্ত মুখার্জী।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ মামলার পুণরায় তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী অনন্ত মুখার্জীসহ উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।

তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজ বরিশালটাইমসকে বলছেন- তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে তাদের নাম ‍উল্লেখ করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন