২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাসের চাপায় হাত বিচ্ছিন্ন বরিশালের রাজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বরিশালের সন্তান রাজীব হোসেনের শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে। তাকে এখনও লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। রাজীবের দুই ভাইসহ খালা, স্বজনরা আশা-নিরাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তারা চিকিৎসা প্রদান করছেন, কিন্তু তার (রাজীব) অবস্থা খুবই খারাপ। তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আরও কিছুই করার নেই।

এদিকে রাজীবের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, রাজীবের অবস্থা দিন দিন এ রকম কী করে হলো। তাকে কেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হলো না। আটক গাড়ির দুই চালকের যেন জামিন না দেয়া হয়, এমন অনুরোধও জানিয়েছেন স্বজনরা।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আইসিইউ’র বারান্দায় রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাই, তিন খালা, এক মামাসহ আত্মীয়স্বজনরা হা-হুতাশ করছেন।

রাজীবের বড় বোন জাহানারা বেগম জানান, ২৪ ঘণ্টা পরও রাজীবের জ্ঞান ফেরেনি। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কোনো নড়াচড়া নেই।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার বহু মানুষ চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। কাউকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে, কিন্তু আমার ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হয়নি। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা হলে এত দিনে তার অবস্থা অনেকাংশ ভালো হয়ে যেত।

রাজীবের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রাজীবের জন্য আমাদের অনেক মায়া হচ্ছে। আমরা ভাবতেই পারিনি রাজীবের অবস্থা এতটা জটিল হয়ে উঠবে। তার যে অবস্থা বর্তমানে রয়েছে, সেখানে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। রাজীবকে এখন বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে যন্ত্রের সহায়তায়, কৃত্রিমভাবে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজীবের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। শরীরের সবকিছু ঠিক থাকলে তার ব্রেইন রেসপন্স করছে না। যদি ব্রেইন কাম ব্যাক করে তাহলে হয়তো রাজীব সুস্থ হবে।

রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাজীবের নিথর শরীরটাই পড়ে আছে। কোনো নড়াচড়ার শব্দ নেই। ডাক্তার বলেছে, এই স্টেজ থেকে সব রোগী ফিরে আসে না। তার অবস্থা খুবই খারাপ। বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। শনিবার পহেলা বৈশাখ।

‘রাজীব গত বছর পহেলা বৈশাখ আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিল। আজ সে মৃত্যুর পথযাত্রায়’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহিদুল ইসলাম। ছোট দুই ভাই হাফেজ আব্দুল্লাহ আর মেহেদি ভাইয়ের জন্য সারাক্ষণ কান্না করে। দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, রাজীবকে যেন ভালো করে দেয়া হয়।

ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব গত ৩ এপ্রিল রাজধানীতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে হাত হারান। দুই বাসের চাপায় তার ডান কনুইয়ের উপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় রাজীবের মাথার সামনে-পেছনের হাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের সামনের দিকে আঘাত লাগে। রাজীবের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। রাজীবের যখন ৮ বছর তখন তার মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা মারা যান। পরে তার খালারাই তাদের লালনপালন করাসহ পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়। রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় তার দুই ভাই পড়াশোনা করছে। তাদের লেখাপড়ার খরচও রাজীব চালাত।

রাজীবের ওষুধপত্র নিজেরাই কিনছেন জানিয়ে রাজীবের খালা জাহানা বেগম সাংবাদিকদের জানালেন, যেসব ওষুধ হাসপাতালে নেই, সেসব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগামী সোমবার বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই চালকের জামিন শুনানির তারিখ। রাজীবের অবস্থা খুবই খারাপ। দুই আসামিকে যেন জামিন না দেয়া হয়। হিংস্র দুই চালকের যেন কঠিন শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হয়।

19 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন