২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ভোলায় অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি, প্রশাসন নীরব

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৯ অপরাহ্ণ, ০৩ অক্টোবর ২০১৮

ভোলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো প্রতারিত হচ্ছেন দিনের পর দিন। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো তদারকি চোখে পড়ছে না বলে জানান রোগীরা।

আবার মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযানের নামে পকেট ভারি করার অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে- লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। নেই প্রশিক্ষিত সেবিকা ও প্যাথলজিস্ট। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রক্ত, মলমূত্রসহ নানান পরীক্ষা করছেন অদক্ষ্য কর্মীরা। প্রায় সময় রোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য রোগীরা পায় না।

আরো দেখা যায় লাইসেন্সবিহীন বেশির ভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধিমালার শর্ত মানেন না। একই প্যাথলজিস্ট দিয়ে অনেক ধরনের রোগ নির্ণয় করে থাকেন এবং তারা ক্লিনিকে থাকেন দিনের কয়েক ঘণ্টার জন্য। আবার অনেক সময় এমবিবিএস চিকিৎসকের বদলে টেকনিশিয়ানরাই পরীক্ষার রিপোর্ট করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে- ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ভোলা সিভিল সার্জন যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্স নেই এমন একটি তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু সে তালিকা ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযানে ধীরগতি আছে বলে অভিমত অনেকেরই।

যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেই তা হলো, ভোলা সদরের পদ্মা নার্সিং ক্লিনিক ও মেডিকো ডায়াগানিস্টিক সেন্টার। বোরহানউদ্দিন উপজেলার মিয়াজি মেডিক্যাল সেন্টার, হাসপাতাল রোডের নিউ পপুলার, কুঞ্জের হাট ডায়াগোনস্টিক সেন্টার। লালমোহনের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক, হাসপাতাল রোডের নিউ মেডিকো, থানা রোডের নিউ মর্ডান, পৌরসভা রোডের রেড প্লাস, লর্ড হার্ডিঞ্জ, লাইফ কেয়ার ও মঙ্গল সিকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ ছাড়াও চরফ্যাশন উপজেলার সদর রোডের শুভ ডায়াগনস্টিক, হাসপাতাল রোডের মেডিনোভা, আঞ্জুর হাট ও শশীভূষণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো লাইসেন্স নেই।

এদের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে নতুন লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরিদর্শনের আবেদন করা হয় বলে জানা যায়। লাইসেন্স না থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে সচরাচর সিজার থেকে শুরু করে চলছে সকল কর্মকাণ্ড।

ভোলার সাত উপজেলায় ৭৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে দীর্ঘদিন যাবৎ। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২০১৭ সালের তথ্য মতে, নিবন্ধিতভাবে ১৮টি ক্লিনিক ও ৩৪টি ডায়াগনস্টিক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি ২৩টি লাইসেন্স নেই এবং একটি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে লাইসেন্স বিহীনদের মধ্যে ১৭টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক বরাবর। কারণ বাকি ৫টির লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা যায়। তবে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অনলাইনে লাইসেন্স নবায়নের কাজ। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান সেখানে আবেদন করেছেন। লাইসেন্সবিহীন ১৭ টি ছাড়াও অন্যান্য ৫৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উন্নত পরিবেশের ছাড়পত্র নেই এবং অনেকেই আয়কর ও ভ্যাট প্রদান করেন না সরকারকে। মাঝে মাঝে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের লাইসেন্সের তদারকির সময় হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারী দ্বারা।

আবার রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে স্থবির হয়ে পরেছে অনেক কর্মকাণ্ড। কিন্তু লাইসেন্সবিহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সেবা প্রদানের নামে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। নেই তাদের কোনো ভালো ল্যাব ও টেকনোলজিস্ট। এ ছাড়াও আলাদা পুরুষ ও মহিলাদের বসার স্থান, নমুনা সংগ্রহের স্থান, ওয়ার্ড ও কেবিন ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত চিকিৎসক নেই জেলার অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তবে এখানে জেলা জুড়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর প্রর্যন্ত মাত্র ৮টি মোবাইলকোট পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানা যায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেখানে ১৫টি মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি খাতে অত্যন্ত নগণ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিমত অনেকেরই।

ভোলা সদর রোডের একজন ব্যবসায়ী বলেন- নতুন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোলেস্টরল টেস্ট করাই। সেখানে আমার ভারতের টেস্টের সাথে কোনো মিল নেই। পরে অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করালে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়।

এদিকে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রতিযোগিতামূলক কমিশনের চুক্তিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়েই চলেছে। যদি কেউ অন্য কোনো ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করান তাহলে সে ফল ত্রুটিপূর্ণ বলে পুনরায় পছন্দের ডায়াগনস্টিকে করতে হয়।

জেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে নিয়ম নীতি মেনে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছি। যারা ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারকে দিচ্ছে না, তারা অবৈধভাবে ব্যবসা করতে পারে না। মালিক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে তাদেরকে আমরা সমিতির অন্তর্ভুক্ত করব না।

এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের মন্থর অভিযানে আজ যত্রতত্র ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে প্রতারণা হচ্ছে এমন অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু হাফিজুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে ৬৮টি প্রতিষ্ঠান তাদের মালিক সমিতিতে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এদের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন- আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা ইতোমধ্যে একজন ভূয়া ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছি এবং আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। লাইসেন্সবিহীন ভোলাতে যে ১৭টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন কারনে সময়মতো আমরা এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। তাই তারা চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাষক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকি বলেন, লাইসেন্সবিহীন যে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে তা আমরা অভিযানের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিগগির এ অভিযান পরিচালিত করব আমরা।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন