২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মঠবাড়িয়ার এক পূজা মন্ডপে ১৫৭ প্রতিমার দূর্গোৎসব

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৯ অপরাহ্ণ, ০৬ অক্টোবর ২০১৮

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় রাজ মন্দির নামে এক পূজা মন্ডপে এবার ১৫৭ প্রতীমার দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলার গুলিসাখালী ইউনিয়নের কবুতরখালী গ্রামের হালদার বাড়িতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সর্বাধিক প্রতিমার সমন্বয়ে এই দূর্গা পূজার আয়োজন ইতিমধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করেছে। আয়োজকদের দাবি, এবার এই মন্ডপেই উপকূলীয় বরিশাল অঞ্চলে সর্ববৃহৎ পূজার আয়োজন। এক মন্ডপে এত প্রতীমার আয়োজন হচ্ছে কেবল এখানেই। আগামী ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে এখানে দূর্গা পূজা শুরু হচ্ছে। উৎসব চলবে টানা পাঁচদিন। সেই সাথে চলছে মেলার আয়োজনও।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কবুতরখালী গ্রামের ডা. সুদীপ কুমার হালদার ও ডা.স্নিগ্ধা চক্রবর্তী দম্পত্তির ব্যক্তিগত আয়োজনে রাজ মন্দিরের আশপাশ জুড়ে প্রায় এক একর

জমিজুড়ে ১৫৭টি প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। এখন চলছে প্রতীমার গায়ে রঙের বর্ণিল প্রলেপ আর সাজসজ্জার কারুকাজ। এই মন্ডপে দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে চার হাজার বছরের পুরানো পৌরাণিক কাহিনীকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর দুর্গোৎসবে হালদার বাড়ি ব্যতিক্রমী পূজা মন্ডপ তৈরি করে থাকে। গত বছর ৪৭টি প্রতিমা সাজিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতি বছর মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

আগামী ১৫ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী পূজা অর্থাৎ বেলগাছের নিচে বোধনের মধ্যে দিয়ে দেবী দূর্গার স্বর্গ থেকে মত্তলোকে আবির্ভাব ঘটবে। মঙ্গলবার নবপত্রিকা অর্থাৎ কলাবউকে মন্ডপে প্রবেশের মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার মহা অষ্টমী। বৃহস্পতিবার মহানবমী পূজার মধ্যে দিয়ে দেবীকে আরাধনা। আর শুক্রবার দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে চার দিনব্যাপী এই দূর্গা উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

কবুতরখালী গ্রামের হালদার বাড়ির রাজদীপ মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূজার বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে বিভিন্ন দেবী দূর্গাসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েকটি সারিতে মূল প্যান্ডেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে প্রতীমা। প্রতীমার কারিগরগণ তাঁদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রং-তুলিতে অপরূপ সাজে প্রতিমা সাজাতে এখন মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। রং তুলির সাজসজ্জার কাজের পাশাপাশি অলংকার পড়ানো হচ্ছে এসব প্রতিমার গায়ে। ১৫৭টি প্রতীমা এখন নানা বর্ণে বর্ণিল হয়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে এখন থেকেই মানুষ প্রতীমা দর্শনে আসছেন।

জানা গেছে, এই রাজ মন্দিরের পূজা মন্ডপের সব থেকে বড় আকর্ষণ হলো- মন্ডপে প্রতিমার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মহাভারতের কাহিনী। এখানে সর্বমোট ১৫৭টি প্রতিমার মধ্যে শিবের বিবাহ, দোক্ষ যজ্ঞ, হনুমান, দশানন রাবন, রাধাকৃষ্ঞ, মা-যশোদা ও শ্রী কৃ,লক্ষ্মী নারায়নসহ কলিযুগের বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করতে চলছে নানা কারুকাজ। এর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক বিভিন্ন শিক্ষণীয় দৃশ্যও নানা প্রতীকী প্রতীমার মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখে মুগ্ধ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও দর্শনার্থীরা। এখন এই মন্ডপে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজের পরিচর্যা।

এই মন্ডপে প্রতিমার কারিগর খুলনা কয়রা উপজেলার শংকর পাল জানান, তিনি গত ৪০ বছর ধরে বংশানুক্রমে প্রতীমা নির্মাণ করে আসছেন। তবে এক মন্ডপে ১৫৭টি প্রতিমা তিনি এবারই প্রথম নির্মাণ করেছেন। প্রায় চার লাখ টাকা মজুরীর চুক্তিতে তিনি এই মন্ডপের প্রতীমা গড়েছেন। ১০ জন সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে দুই মাসের টানা পরিশ্রমে দেব-দেবীর ১৫৭টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। নানা রঙে আর নানাভাবে প্রতিমা সাজানো হয়েছে। এসব প্রতিমা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

হালদার বাড়ির দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রধান আয়োজক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী শৈলেশ্বর হালদার বলেন, বর্তমানে এই মন্ডপ এই অঞ্চলে বৃহৎ দুর্গা মন্ডপে রূপ নিয়েছে। এলাকার লোক এভাবে ধর্মীয় সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ কম পান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নারী-পুরুষসহ সকল মানুষ এখানে পূজা উপভোগ করতে আসবেন।

এদিকে দুর্গোৎসব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম ছরোয়ায়ার। তিনি আরো জানান, উপজেলার সব পূজামন্ডপে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন