২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মাদকের সাম্রাজ্য নতুনবাজার : নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কাউন্সিলর লিটু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ১৫ জুলাই ২০১৮

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী নইমুল হোসেন লিটু। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে- প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে।

জানা গেছে- এক প্রার্থীর সাথে আর্থিক লেনদেন ও একটি সমিতিতে পদ পাইয়ে দেবার চুক্তিতে ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ১৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া হানিফ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু মনোনয়ন বাতিল হওয়া আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী সুমন হালদার আশীষ এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- ‘নির্বাচনে দাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে আমাকে চাপ প্রয়োগ না করলেও বাহিরে বসে আমার নামে অনেক কথা রটিয়েছে। তবে এটুকু শতভাগ নিশ্চিত যে হানিফ চৌধুরীকে হুমকি ধামকি ও চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হানিফের উপর চাপ প্রয়োগ করেছেন গাজী নইমুল হোসেন লিটু ও তার সমর্থকরা। তা না হলে এবারের নির্বাচনে হানিফ চৌধুরী ও নইমুল হোসেন লিটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত এই ওয়ার্ডে।’

সূত্রমতে- গাজী নইমুল হোসেন লিটু এই নিয়ে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন ১৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে। তবে এবারেই প্রথম বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায়। তাছাড়া তিনি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী। তবে গত সিটি নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ছিল প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকের উপর। এবারেও কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তারই এলাকাবাসীর কাছ থেকে।

এলাকাবাসী জানিয়েছে- এই ওয়ার্ডের নতুনবাজার এলাকায় মাদকের সমস্যাটি বিশাল আকার ধারণ করেছে। যে কারণে কাউন্সিলর কার্যালয়ের পিছনে ও সামনে মাদক ব্যবসা বেশ জমজমাট ভাবেই চলে।

অভিযোগ রয়েছে- কতিপয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন লিটুরও।

নতুনবাজার এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- বছর কয়েক আগে বগুরা পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই আলমগীর হোসেন নতুনবাজারের মোড় থেকে কয়েকজনকে মাদকসহ আটক করে। তবে এই নিয়ে সেখানে তুলকালাম কান্ড শুরু করে কাউন্সিলর লিটু। কেননা যাদের আটক করা হয়েছিল তারা তার সমর্থকগোষ্ঠিদের একটি অংশ। এই নিয়ে গভীর রাতে বেশ ঝামেলাও হয় কাউন্সিলর কার্যালয়ে। পরে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের পালন করে রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

তবে অনেকে বলছেন এই ওয়ার্ডের তুলনামূলকভাবে উন্নয়ন হয়েছে। যা সমস্যা রয়েছে তা শুধু মাদক নিয়ে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের বসবাস যে ওয়ার্ড ঘিরে হয় সেখানে তো টুকিটাকি সমস্যা থাকবেই।

লিটন হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন- এই ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় সড়ক ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। যেমন নতুনবাজারের চার রাস্তার মোড়, পাবলিক স্কুল সড়ক, ইসকন মন্দিরের পাশের গলি, বরিশাল কলেজের পাশের গলিসহ বিভিন্ন সড়কে। তবে এই সড়কগুলোর মাঝে মধ্যে নাম মাত্র সংস্কার কাজ করা হলেও ঠিকমত তা করা হয়না যে কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় ব্যাপক ভাবে। তাছাড়া দীর্ঘ বছরেও পাকা সড়ক হয়নি ইসকন মন্দিরের পাশের গলিটির। অনেকবার বলেও বর্তমান কাউন্সিলরকে দিয়ে এই সড়কটি পাকা করানো সম্ভব হয়নি। যে কারণে কাঁদা ও ময়লা পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় এই এলাকার বাসিন্দাদের।

রাফিউল ইসলাম নামে এক ভোটার জানান- এই ওয়ার্ডে অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, বরিশাল কলেজ, জগদীশ স্বারস্বত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অমৃত লাল দে কিন্ডারগার্টেন, মথুরানাথ পাবলিক স্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী শংকর মঠ মন্দিরও। তবে এই সব প্রতিষ্ঠানের সামনে সার্বক্ষনিক ময়লার স্তূপ দেখতে পাওয়া যায়। যা ঠিকমত পরিষ্কার করা হয়না। যে কারণে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া রাতে শংকর মঠের মত ঐতিহ্যবাহী শতবছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটিতে আলোর কোনো ব্যবস্থাও নেই। ল্যাম্প পোস্ট থাকলেও লাইট নেই। বিষয়টি বর্তমান কাউন্সিলর অবগত রয়েছেন। তবে অবগত থেকে কোনো কাজ হয়না। কেননা তিনি এবারে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচন করছেন এই ওয়ার্ডে। তাই এই নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। তাছাড়া ক্ষমতাসীণ দলের পদধারী নেতা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন কোনো আলোচনাও করে না। তাছাড়া শীতলা খোলা রোডের ময়লার ভাগারের অবস্থা আরো খারাপ। আশপাশ এলাকার পুরো ময়লা এখানে এনে ফেলা হয়। যাতে বেশ ভোগান্তি সৃষ্টি হয় নগরবাসীর।

গফুর সড়ক এলাকার বাসিন্দা সাইফুল আহম্মেদ মুনীম জানান- কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন লিটু কাজ করেননি সেটা বলা যাবে না। তিনি কাজ করেছেন তবে তার কিছু কর্মকান্ডের কারণে আমরা তার উপর নাখোশ রয়েছি। এর মধ্যে তিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবলুর উপর তার বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়। যেটা নিয়ে বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয় সেসময়। তাছাড়া মুখ চেনা লোকজনদের বিভিন্ন ভাতা দিলেও যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাদের তিনি ভাতা দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা রুমা সরদার ও নাজির মহল্লা এলাকার বাসিন্দা বল্লভ রায় বলেন- নির্বাচন এলেই কদর বাড়ে আমাদের। এছাড়া এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দেখতে পারিনা। তারা সম্ভবত আকাশে উড়ে। এবারে তো আর তাদের দেখাই যাবে না। কেননা বিনা পাসপোর্টে এবার ভিসা পেয়েছেন তিনি। নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তিনি এতটাই প্রভাব বিস্তার করেন যে এতবড় একটি ওয়ার্ডের কোনো স্থান থেকেই কেউ নির্বাচন করছেন তার সাথে। দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের। তবে আশা করি এবারে তিনি জনগনের জন্য কাজ করবেন এবং উন্নয়ন করবেন এই ওয়ার্ডের।

এসব বিষয়ের প্রেক্ষিতে ১৯নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আসন্ন সিটি নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন লিটু  জানান- ওয়ার্ডের প্রায় সকল রাস্তাই আমি মেরামত করেছি। বরিশাল কলেজের সামনের রাস্তাটির কাজ চলমান রয়েছে। শুধু মাত্র আমার বাড়ির রাস্তা মথুরানাথ পাবলিক স্কুল সড়কটির এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে ইনশাল্লাহ সেটাও করা হবে।

তিনি আরো বলেন- পানি সংযোগ ৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। আরও ১০ কিলোমিটার প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে। ওয়ার্ডে ২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। যা থেকে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আমি তেমন কোনো সফলতা অর্জণ করতে পারিনি। তবে দুইটি মাস্টার ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচনী কাজের কারণে বর্তমানে স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।

মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন- এটি আমাদের লজ্জাস্কর। আমার কার্যালয়ের সামনে ও পিছনে নগরীর মাদক সম্রাজ্ঞী বেবী ও হারুণ এবং তাদের ছেলেরা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মাত্র তিন’শ গজ দূরে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও এই মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে চলমান দেশ ব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে মাদক বিক্রি একটু কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। অভিযানের পর থেকেই বেবী পলাতক রয়েছে এবং হারুণ মরণ ব্যাধী রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যশায়ী রয়েছেন। তাদের ছেলেরা মাঝে মধ্যে উঁকি মারলেও অভিযানের কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না তারা।’’

 

 

Edit By Tanmoy Tapu

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন