২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মামলায় জর্জারিত বরিশাল বিএনপি, টেনশন মুক্ত আওয়ামী লীগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৫৭ অপরাহ্ণ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বরিশালের ৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও ইসলামী আন্দোলনের অর্ধশতাধিক নেতা নানা প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রার্থী হতে লবিং শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি এলাকায় জনসংযোগ করে চলেছেন। এতে করে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। বড় দলগুলোর মনোনয়ন কারা পেতে পারেন, কার সম্ভাবনা বেশি এনিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া ও মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যে চলছে নিখুঁত বিশ্লেষণ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনরাও মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তবে যারাই প্রার্থী হোক না কেন শেষ পর্যন্ত ৬টি আসনের মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগ, ২টিতে বিএনপি ও ১টিতে জাপা প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।

বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় যাদের খোঁজ এতদিন পাওয়া যায়নি, হঠাৎ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সেই সব রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। সাক্ষাৎ তো দূরের কথা, যাদের ফোনেও পাওয়া যেত না তারাই এখন সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। কোরবানীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ব্যানারে এসব সুবিধাভোগী নেতারা কর্মী বাগাতে নানা তৎপরতা চালিয়েছেন। এতে দলের সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেলেও, সুযোগসন্ধানী এসব নেতার হঠাৎ মধুর বুলিকে কানে না তুলে হাইকমান্ড থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ত্যাগী কর্মীরা। তারা জানান, দলের প্রার্থী মনোনয়নের পর মাঠে নামবেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নেতা জানান, গত জন্মাষ্ঠমীতে অতিথিদের না পাওয়ায় মনে কষ্ট ছিলো। এবারের জন্মাষ্ঠমীতে অতিথি সামলাতেই যেন বেগ পেতে হয়েছে। সকলেই উপস্থিত থেকে তাদের বিশেষ সহায়তা করেছেন।

বরিশাল-১ আসন (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বরিশাল আওয়ামী লীগের অভিভাবকের এ আসন থেকে অন্য কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন। তবে অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারও মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন বলে জানা গেছে।

এ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের নামও আলোচনায় আছে।

জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন গৌরনদী উপজেলার সভাপতি ইউনুস বেপারী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার সভাপতি সরদার হারুন রানা। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মেহেদী হাসান রাসেল। জানা গেছে, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হওয়ায় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগ এখানে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় তাদেরই জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।

বরিশাল-২ আসন (উজিরপুর-বানারীপাড়া)

বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তিনি ছাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে প্রার্থিতার দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু প্রমুখ।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, রনকুল ইসলাম টিপু, দুলাল হোসেন, শহীদুল হক দুলাল এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান।

জাতীয় পার্টি থেকে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা নেছার উদ্দিন এর নামও এলাকায় আলোচনায় আছে। এ আসন থেকে জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) অ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান আনিস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনেও আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

বরিশাল-৩ আসন (বাবুগঞ্জ-মুলাদী)

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিরাজউদ্দিন আহমেদ, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম মিঠু ও কাজী এমদাদুল হক দুলাল।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অপর ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান ও সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে পারেন।

জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান ও যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. আতিকুর রহমান।

তবে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি (এ)। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা মুন্সী ও মুলাদী উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল্লাহ হারুন। তবে এ আসনে বড় দুই দলের মধ্যে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীরই জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।

বরিশাল-৪ আসন (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ)

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, দু’বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম, মেজর (অব.) নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মজিবর রহমান হাওলাদার, মেজর (অব.) মহসিন সিকদার প্রমুখ।

বিএনপির মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর ও মোশারফ হোসেন মংগু। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ এছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের মনোনয়ন প্রার্থী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে লবিং করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এছহাক ভূইয়া ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক হারুন আর রশিদ। এই আসনেও আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

বরিশাল-৫ আসন (মহানগর-সদর)

বিশেষ মর্যাদার বলে সমাদৃত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমান গুরুত্ব দিচ্ছে আসনটি নিজেদের ঘরে নিতে। ক্ষমতাসীন দল থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচিতরা হলেন, বরিশাল সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু প্রমুখ।

এ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নব্বইয়ের দশক থেকেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার সদর আসনে বরাবরের মতো বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। এ আসনে এখন পর্যন্ত তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিলকিস জাহান শিরিন ও আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ।

এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম সদর আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টি (এ) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর সভাপতি টানা ৪ বার নির্বাচিত কাউন্সিলর একেএম মরতুজা আবেদীন এবং জেলার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল। এ আসনে যারাই প্রার্থী হোক না কেন বিএনপির জয়লাভের সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুর রশীদ খান, প্রয়াত এমপি মাসুদ রেজার সহধর্মিণী জেলা পরিষদ সদস্য আইরিন রেজা ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেন খান, শিকদার খলিলুর রহমান, আব্দুস শুক্কুর বাচ্চু ও জেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত নজরুল ইসলাম খান রাজন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন ডাকুয়া।

জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির (এ) প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান এমপি নাসরিন জাহান রত্না আমিন। জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করলেও এ আসনে প্রার্থী হবেন তিনি। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে জোটের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা মো. মহসীন। এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার মধ্যে লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত জাপার প্রার্থীই জয়লাভ করতে পারেন।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন