২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মেঘনায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার, ৭ বছরে নিহত তিন শতাধিক

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৬ অপরাহ্ণ, ৩০ আগস্ট ২০১৮

ভোলার ৭টি উপজেলার ছোট-বড় ২৫ রুটে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল করছে। প্রতিদিন এসব রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে কারণে একের পর এক নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গত ৭ বছরে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় তিন শতাধিক যাত্রী মারা গেছে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে অন্তত আরো শতাধিক মানুষ।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রলার দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে গত বছরের ১১ জুন। মনপুরার মেঘনায় যাত্রীবাহী এই ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও সারা বছর ছোটখাট দুর্ঘটনায় আরো দেড়শ নিহত হয়েছে বলে বিআইডব্লিটিএ সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে কোকো ট্রাজেডি। সেই দুর্ঘটনায় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়মিত অভিযান, নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা না করা চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকা জীবন রক্ষাকারী লাইফ জেকেট, বয়া, বৈরী আবহাওয়া সতর্কতা জারী না করা ও দুর্ঘটনার তদন্ত না করার ফলে কোন নিয়ম মানছে না ট্রলার মালিকগণ।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ডেঞ্জার জোন পয়েন্ট দিয়ে পারাপার হচ্ছে নৌযান। এতে চরম ঝুকির মধ্যে পড়ছে যাত্রীদের জীবন। অভিযোগ উঠেছে, ঘাটগুলোতে প্রভাবশালী চক্র ইজারাদার থাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ এসব নৌযান চললেও কোনো অভিযান নেই প্রশাসনের।

সূত্র আরো বলছে, ভোলার জলসীমার ১৯০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্জার জোনের আওতায় আনা হয়েছে, ওইসব পয়েন্টে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সি সার্ভে ছাড়া সকল ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। কিন্তু সে নিয়ম মানা হচ্ছে না ভোলার ২৫টি রুটে। বিশেষ করে ভোলা-লক্ষীপুর, তজুমদ্দিন-মনপুরা, ধুলিয়া-ভেলুমিয়া, নাজিরপুর-কালাইয়া, দৌলতখান-সন্দ্বীপ, ইলিশা-বরিশাল রুটে ঝুঁকি অনেক বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইঞ্জিনচালিত ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন অবৈধ ইঞ্জিন চালিত ট্রলারগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন মনপুরা ও হাতিয়াসহ অভ্যন্তরীণ চরের যোগাযোগের একমাএ ভরসা নৌ-পথ। তাই এসব চরের সংযোগ পথেই চলছে অবৈধ ছোট ছোট ট্রলার।

ঝুঁকিপূর্ণ রুটগুলোর মধ্যে হাজিরহাট-কলাতলী, খিজিরখাল-চেয়ারম্যানের ঘাট, মনপুরা-তজুমদ্দিন,রামনেওয়াজ-কলাতলী, হাজিরহাট-মঙ্গল সিকদার, মনপুরা-ঢালচর, হাজিরহাট-চরফ্যাশন, জনতা বাজার-চরফ্যাশন, মনপুরা-সন্দ্বীপ ও মনপুরা-চর নিজাম উল্লেখযোগ্য। এসব রুট সুস্ক মৌসুমে শান্ত থাকলের বর্ষাও মৌসুমে অশান্ত হয়ে উঠে। এ ছাড়াও ডেঞ্জার জোনের আওয়াতায় রয়েছে বেশিরভাগ রুট।

মনপুরার রামনেওয়াজ ঘাটের যাত্রী আবুল কাশেম, রহিম, সালাউদ্দিন, লোকমান ও সিরাজ জানান, প্রয়োজনের তাগিদে আমরা জীবন বাজি রেখেই যাতায়াত করি। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। নিরাপদ নৌযান চললে যাত্রীদের এমন ঝুঁকি নিতে হতো না।

হাজিরহাট এলাকার লোকমান হসেন বলেন, ট্রলারগুলোর একটিও ফিটনেস নেই, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই তারা উওাল নদী পার হয়। যাত্রীরা বাধা দিলেও জোরপূর্বক যাত্রী উঠিয়ে তারা পারাপার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ভোলা বিআইডব্লিটিএ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. নাছির বলেন, উত্তাল মেঘনায় ট্রলার চলাচলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরেও যদি কেউ চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন