১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মেহেন্দিগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০৩ অপরাহ্ণ, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী বিদ্যালয় মেরামতের ক্ষেত্রে প্রকৌশল অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত উৎকোচের বিনিময়ে বিল ছেড়ে দিচ্ছেন। অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে।

তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো স্থানীয় সাংবাদকর্মীরা সুবিধা নেয়ার জন্য এমনটা করছেন বলে দাবি করেন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ২০১৬ সালের মে মাসে মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে মো. আকতারুজ্জান যোগদান করেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম শুরু হয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিধান লঙ্ঘন করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কনিষ্ট শিক্ষকদের সুবিধামত স্কুলে বদলি করেন।

ডিপিইএড প্রশিক্ষণের জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পছন্দের শিক্ষদের নামের তালিকা পাঠান। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতে বরাদ্দ থেকে ২০ পারসেন্ট টাকা কেটে রাখেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ১৮টি স্কুলে ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ আসে।

ভ্যাট কর বাদ দিয়ে স্কুল প্রতি ৬০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয় বলে জানান মহিষা বাংলা বাজার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুর রহমান ও পূর্ব কাজিরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানসহ একাধিক শিক্ষক। আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২৮টি স্কুলের জন্য ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ আসে।

সেই টাকা থেকেও কর, ভ্যাট বাদে স্কুল প্রতি ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে সরকারী নিয়ম হলো উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের মাধ্যমে স্কুলের মেরামত কাজের তদারকী সহ কাজের শেষে প্রত্যায়ন নিয়ে বিল দেয়ার কথা। কিন্তু প্রকৌশলীর প্রত্যায়ন ছাড়াই ২৮ টি স্কুলের বিল তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন।
এনিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন মোল্লা জানান, ক্লাস্টার ভিত্তিক কাজ হয় এবং সেখানে একজন করে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার থাকেন। তারা কাজের অগ্রগতি বা মান সম্পর্কে রিপোর্ট দেয়ার পর শিক্ষা অফিসার চেক প্রদান করেছেন।

তবে তিনিও প্রত্যায়নপত্র দিয়েছেন কিছু কাজের। তকে কাজের মান যাছাই না করে প্রত্যায়নপত্র দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, লাখ টাকার নীচে কাজ, বাকিগুলো দেয়ার বেলায় দেখবেন।

দুই অর্থ বছরের স্কুল লেভেল ইমপ্র“ভমেন্ট কাজ (স্লিপ) বাবদ ২০৬ টি স্কুল প্রতি ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই টাকা থেকে স্কুল প্রতি এক হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, সরকারী কোন পরিপত্র না থাকা সত্বেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন মেহেন্দিগঞ্জে যোগদানের পর মডেল টেষ্ট পরীক্ষার নামে ৫ম শ্রেণির প্রায় ৭ হাজার ৫০৯ জন শিক্ষার্থীর কাজ থেকে ৪০ টাকা করে ফি বাবদ আদায় করেন।

এখানে প্রতি পরীক্ষার্থীর খাতা বাবদ ১৫টাকা ও প্রশ্ন পত্র বাবদ ৬ টাকা খরচ ব্যতীত আদায়কৃত বাকী টাকা শিক্ষা অফিসার আত্মসাত করেন। শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও রয়েছে আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ।
এর আগের কর্মস্থলগুলোয় আকতারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাগেরহাট শরনখোলায় চাকুরীকালীন সময় অনিয়ম করে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগে দুর্নীতি করায় ২০১৪ সালের ৬ মে টাইম নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা চাকুরীর সময় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা উপকরন ক্রয়ের ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় ২০১৫ সালের ২২আগস্ট দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। বরগুনার বেতাগীতে চাকুরী করার সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ দৈনিক যায় যায় দিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জান মিলনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, বিদ্যালয় মেরামতের কাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক করে থাকেন। তারা শুধু চেক প্রদান করেন। এক্ষত্রে প্রকৌশল অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে।

মডেল টেস্ট ২টি নেয়ার নিয়ম সরকারী ভাবেই রয়েছে। সময় কুলোয়নি বলে তিনি ১টি নিয়েছেন সেখানে কোন অনিয়ম হয়নি।

এছাড়া শিক্ষক বদলী, ডিপিইএড প্রশিক্ষণের জন্য নাম পাঠানো বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেতে টাকা নেয়ার অভিযোগুলো ভিত্তিহীন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির কথা শুনেছি। ত

বে লিখিত অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

 

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন