২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মোর স্বামী-পোলারে আইন্যা দ্যান

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩৩ অপরাহ্ণ, ২৬ জুলাই ২০১৮

ও ভাই মোর স্বামী-পোলায় সাগরে গ্যাছে, হুনছি বইন্যায় সাগরে ডুইব্যা গ্যাছে। মোর স্বামী-পোলারে আইন্যা দ্যান। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো উঠানে এভাবেই বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন মো. তোতা মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম।

মো. তোতা মিয়া, তার ছেলে মো. কবির হোসেন ও ভাতিজা মো. রিপন নিখোঁজ রয়েছেন। শুধু তারাই নন, নিখোঁজ রয়েছেন একই গ্রামের আরও ১৭ জেলে। তাদের সবার পরিবারেই চলছে আমেনা বেগমের মতো আহাজারি। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলেদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাদুরতলা জেলে পল্লী।

অপরদিকে, প্রতিবেশী জেলে পিতৃহারা হিরু মিয়ার মা আনোয়ারা বেগম একমাত্র ছেলের শোকের বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কখনো কখনো অচেতন হয়ে পড়েন। স্ত্রী শারমিন বেগম আট মাসের কন্যা সন্তান আয়শাকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন।

কাউকে দেখলেই নিখোঁজ জেলে মো. রিপনের ১৫ বছরের মেয়ে তানিয়া বলছে, মোর আব্বারে আইন্যা দেন, মোর আর কিছুই লাগবে না। মোরে কেডা স্কুলে নিয়া যাইবে?

জেলে পল্লী বাদুরতলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, একই গ্রামের ১৮ জন জেলে বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। শনিবার (২১ জুলাই) সকালে হঠাৎ গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন ৯২ জেলে। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে ২৩ জন ফিরে এসেছেন। বাকি ৬৯ জন নিখোঁজের মধ্যে ১৮ জন বাদুরতলা গ্রামের বাসিন্দা।

কথা হয় ট্রলার মালিক আবুল হোসেন ফরাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পাঁচটি ট্রলার ও ৬৯ জন জেলে এখনও নিখোঁজ। তাদের উদ্ধারের জন্য মালিক সমিতির ছয়টি ট্রলার ও নৌবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।

এ বিষয় পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাকিল আহম্মেদ শিবু বলেন, আমার একই গ্রামের ১৮ জেলে নিখোঁজ। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ যৌথভাবে তাদের তালিকা করেছি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ফিরে আসা জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাদুরতলা গ্রামের ১৮ জনসহ নিখোঁজ ৬৯ জেলের স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। চলছে নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে জেলে পল্লী।
ফিরে আসা ২৩ জেলের মধ্যে রয়েছেন এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি দেলোয়ার হোসেন ও এফবি ভাই ভাই ট্রলারের মাঝি শাহিন। তারা জানান, শনিবার (২১ জুলাই) সকালে গভীর সমুদ্রের ঝড়ের কবলে পড়েন তারা। ওই সময় দিক হারিয়ে ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমার কাকদ্বীপ এলাকায় চলে যান তারা। রোববার সকালে ভারতীয় জেলেরা তাদের বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে দিয়ে যান। তারা তিনদিন ট্রলার চালিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ঘাটে ফিরেছেন। বাকিরা কে কোথায় তা তারা জানেন না।

তারা আরও জানান, তাদের ট্রলারের সঙ্গে এফবি জুয়েল, এফবি সুমন ও এফবি মায়ের আঁচলসহ ১০টি ট্রলার ছিল। যার মধ্যে দু’টি পাথরঘাটার। বাকি ট্রলারগুলো চট্টগ্রাম, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন