২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

যে আগ্নেয়গিরি থেকে বের হয় শুধু ‘কাদা’!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৫ অপরাহ্ণ, ৩১ আগস্ট ২০১৮

প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্ট পৃথিবী প্রথম দিকে অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। ধীরে ধীরে তা শীতল হয়ে আজকের এই অবস্থায় আসলেও এখনো পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের অভ্যন্তর ভাগ উত্তপ্ত। পৃথিবীর অভ্যন্তরে সবচেয়ে ভেতরের দিকের স্তরের নাম হলো কোর। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে আছে উত্তপ্ত ও গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস। এই উপাদানগুলো কখনো কখনো অতিরিক্ত তাপ ও চাপের ফলে পৃথিবীর ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। এক সময় কোনো না কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে গরম বাতাস, জলীয় বাষ্প, গলিত শিলা, কাদা, ছাই, গ্যাস প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। নির্গত এই সকল পদার্থ ভূপৃষ্ঠের ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। তখন একে আগ্নেয়গিরি বলে।

তবে সব অগ্ন্যুৎপাতেই যে গরম বাতাস, গলিত শিলা কিংবা জলীয় বাষ্প বের হয়ে আসে এমন নয়। পৃথিবীতে ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের আগ্নেয়গিরিও রয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী এই আগ্নেয়গিরির নাম ‘কাদা আগ্নেয়গিরি’। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কাদা আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটলেও সবথেকে বেশি কাদা আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটে আজারবাইজানে। এই কারণে আজারবাইজানকে কাদা আগ্নেয়গিরির রাজধানীও বলা হয়।

ইউরোপের সীমানায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের এই তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে প্রতি বছর চারশ’র বেশি কাদা আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটে। কাদা আগ্নেয়গিরির মূল বিষয় হলো প্রতি মুহূর্তে বুদ বুদ আকারে নিচের থেকে কাদা উঠতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় কাদা উঠে এক সময়ে তা বিরাট পাহাড়ের আকার লাভ করে। উপর থেকে এসব পাহাড়কে দেখলে খুবই শীতল, শান্ত মনে হবে। কিন্তু এর নিচে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে কাদার উদগীরণ। ফোটায় ফোটায় উঠছে কাদা। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেই কেবল এর পার্থক্য চোখে পড়বে।

মূলত ভূঅভ্যন্তরে যেখানে ‘সাবডাকশন জোন’ থাকে সেখানে এই ধরনের আগ্নেয়গিরি উৎপন্ন হয়। সাবডাকশন জোন হলো এমন একটি অঞ্চল যেখানে একাধিক টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। প্রতিটা সাবডাকশন জোনের দুটি টেকটোনিক প্লেট প্রতি বছর গড়ে এক সেন্টিমিটার করে বিচ্যুত হয়। আর যখনই এই ধরনের দুটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয় তখনই ঘটে ভূমিকম্প, সুনামি এবং ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যূৎপাত।

ভূঅভ্যন্তরে তৈরি গ্যাস ধীরে ধীরে কাদা-মাটি, পানি আর তেলের সাথে বাইরে আসার পথ খুঁজতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় যে গ্যাস বের হয়ে আসে তাতে অগ্ন্যূৎপাতের মতো ভয়াবহ কিছু ঘটে না। আর এই গ্যাস সাধারণত কার্বোহাইড্রোজেন জাতীয় গ্যাস। অর্থাৎ যেখানেই কাদা আগ্নেয়গিরি থাকে সেখানে কার্বোহাইড্রোজেন থাকার সম্ভাবনা থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, ব্যতিক্রমর্ধী এই আগ্নেয়গিরির কাদামাটি ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক তৈরি এবং নির্মাণ শিল্পে। এর প্রায় ২০ থেকে ৩০টি খনিজ ব্যবহৃত হয় সিমেন্ট তৈরিতে।

বর্তমানে আজারবাইজার সরকার এই ধরনের কাদা আগ্নেয়গিরির বড় বড় ক্ষেত্রগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আগে স্থানীয়রা এসব জায়গা থেকে এই কাদামাটি চুরি করে বাড়ি তৈরির কাজে লাগাতো। এই কাদা লাভার মতো গরম নয় বরং এটির তাপমাত্রা সাধারণত ২২ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এমনকি কিছু কিছু কাদা আগ্নেয়গিরি গোসলের জন্যও বেশ উপযুক্ত। কিছু ক্ষেত্রে চামড়ার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয় ব্যতিক্রমী আগ্নেয়গিরির এই কাদামাটি। তবে সব আগ্নেয়গিরির কাদামাটিই স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। অনেক গভীর থেকে এই গ্যাস নির্গত হয় বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাতে তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকার আশঙ্কা থাকে। প্রতি বছরই এসব আগ্নেয়গিরির কাদামাটির তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করে বার্ষিক রিপোর্টও প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন