২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

সমুদ্রতলে জাহাজের ডুবলে তার মালিকানা কে!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ০৬ জুন ২০১৮

তিনশো বছর আগে ব্রিটিশ জাহাজের হামলায় সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গিয়েছিল স্প্যানিশ জাহাজ স্যান হোসে।

আমেরিকান কলোনি থেকে ওই জাহাজটি সোনা, রূপা আর দামি পাথর স্পেনের রাজা ফিলিপ সিক্সের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল বলে মনে করা হয়, যা দিয়ে স্পেনের উত্তরাধিকারের যুদ্ধ চালানোর কথা ছিল।

কলম্বিয়া বলছে, কার্টাজেনা উপকূলের কাছে ২০১৫ সালের দিকে তারা প্রথম এসব জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে।

গতবছর প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল স্যান্তোস বলেন যে, জাহাজের উদ্ধার অভিযানটি নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করবে, তা শুধু কলম্বিয়ার জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই।

এর মধ্যেই বিজ্ঞানীদের একটি দল পানির নীচে রোবট ব্যবহার করে জাহাজটি সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহ করে, যা এর আগে জানা যায়নি। অনেকে এর মধ্যেই ধারণা করতে শুরু করেছেন, এখন পর্যন্ত সমুদ্র তলে পাওয়া সবচেয়ে বেশি ধনসম্পদের ভাণ্ডার এই জাহাজটি, যার মূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

কিন্তু জাহাজটির ধনসম্পদের মালিকানা এখন আসলে কে পাবে?
এ ধরণের ক্ষেত্রে মালিকানার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নির্ধারিত করা হয়েছে। সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং আইনজীবী রবার্ট ম্যাকিন্টোশ বলছেন, এটা আসলে জটিল একটা ব্যাপার, যেহেতু আইনের বিভিন্ন ধারা থেকে এ ধরণের ধ্বংসাবশেষের ওপর অনেক দেশ আর অনেক মানুষ অধিকার দাবি করতে পারেন।

যেমন এই জাহাজটির আসল মালিক সেটির মালিকানা দাবি করতে পারে। কিন্তু জাহাজটি যে দেশের জলসীমায় পাওয়া যাবে, তাদের অধিকারই বেশি হবে। ডুবন্ত জাহাজ থেকে রত্ম সম্পদ উদ্ধার করে আনা একটি বড় ব্যবসা।

তবে সমুদ্র প্রত্নতত্ত্ববিদ পিটার ক্যাম্পবেল বলছেন, অনেক সময় দেখা যায়, এ ধরণের একটি জাহাজে যে সম্পদ থাকে, উদ্ধার করতে তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়।

তবে নতুন গবেষণা বলছে, স্যান হোসে জাহাজে যে সম্পদ রয়েছে, তার মূল্য হতে পারে ১৭ বিলিয়ন ডলার। যখন কলম্বিয়ান সরকার ২০১৫ সালে জাহাজটি সনাক্তের ঘোষণা দিয়েছিল, তখন এর মূল্য ধরা হয়েছিল ১ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার।

এখন জাহাজের মালিকানা কে পাবে?
সমুদ্রতলের সাংস্কৃতিক সম্পদ উদ্ধার, রক্ষা এবং সংরক্ষণের বিষয়ে ২০০১ সালের ইউনেস্কো একটি কনভেনশন গ্রহণ করেছে।

সে অনুযায়ী, জাহাজটি যে দেশের, তারা প্রথমে মালিকানা দাবি করতে পারবে। জাহাজটি যদি শত শত বছর আগেও ধ্বংস হয়ে থাকে, তাহলে সেই জাহাজের আসল মালিক বা তাদের উত্তরসূরিরাও মালিকানা দাবি করতে পারবে।

এ ধরণের ঘটনাও রয়েছে যে, কোন দেশে জাহাজের মালিকানা অন্য দেশের কাছে হস্তান্তর করেছে যাতে সেটি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা যায়। তবে জাহাজটি যদি অন্য কোন দেশের জলসীমায় পাওয়া যায়, তাহলে তারাও সেটির মালিকানা দাবি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকলে সেটির অন্য আইনি ব্যাখ্যা রয়েছে।

যখন কোন জাহাজ সনাক্ত হয়, যে দেশে সেটি তালিকাবদ্ধ থাকে, প্রথমে তাদের সেটির ওপর অধিকার দাবি করতে হয়, যাতে অন্য কোন দেশ সেটি নিয়ে মামলা করতে না পারে। যুদ্ধজাহাজ এবং সরকারি জাহাজের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা বেশি ঘটে।

২০০৯ সালে ওডেসি মেরিন এক্সপ্লোরেশন নামের যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি জিব্রাল্টার উপকূলের কাছে একটি স্প্যানিশ জাহাজ থেকে থেকে ১৭ টন মুদ্রা উদ্ধার করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছিল।

কিন্তু এ নিয়ে মামলা হওয়ার পর মার্কিন বিচারক প্রায় পাঁচ লাখ ডলার মূল্যের মুদ্রা আর অন্যান্য প্রত্ন সম্পদ স্পেনে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওডেসি দাবি করেছিল যে, তারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজটি পেয়েছে। কিন্তু স্পেন দাবি করেছে, তারা কখনোই জাহাজটি মালিকানা ছেড়ে দেয়নি এবং এসব সম্পদ স্পেনের জাতীয় সম্পদ।

আবার জাহাজে যেসব সম্পদ পাওয়া যাবে, সেগুলো নিয়েও বিতর্ক থাকতে পারে। যেমন ওডেসির উদ্ধার করা সম্পদের মধ্যে কিছু জিনিসের মালিকানা দাবি করেছিল পেরু। তাদের দাবি, সেসব মুদ্রা পেরুতে তৈরি করা হয়েছে। এখন স্যান হোসের ক্ষেত্রে কি ঘটতে যাচ্ছে, তা সময়ই বলে দেবে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন