২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সাংবাদিক ম্যানেজে ব্যর্থ ভূমিদস্যু মোয়াজ্জেম, মিডিয়াপাড়ায় দৌঁড়ঝাপ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৬ অপরাহ্ণ, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের ভূমিদস্যু খ্যাত ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এবার ভিন্ন কৌশলে বরিশালের মিডিয়াপাড়ায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। গত ১৬ অক্টোবর বরিশালের স্থানীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের পশ্চিম সাতলা ও শিবপুর গ্রামে ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেনের ভূমিদস্যুতার নানান অভিযোগের সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরআগে বিষয়টি ধাঁমাচাঁপা দিতে সুচতুর মোয়াজ্জেম হোসেন তার সহযোগীদের দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার প্রস্তাব দিয়েও ব্যর্থ হয়। এরপরই বরিশালের মিডিয়াপাড়া ম্যানেজ করতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল গোলন্দাজ।

সূত্রমতে- উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা শিবপুর ও পশ্চিম সাতলা গ্রামের শতাধিক বাসিন্দাদের পূর্ব পুরুষের আমল থেকে ভোগদখলীয় দুই হাজার একর জমির ওপর প্রভাবশালী ভূমিদস্যু মোয়াজ্জেমের লোলুপ দৃষ্টি পরে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতারক চক্রের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে দীর্ঘদিন থেকে মিথ্যে মামলা দায়ের করে হয়রানী করে আসছেন চিহ্নিত ভূমিদস্যু মোয়াজ্জেম। ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক নিরিহ পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের সম্পত্তি দখল করে গ্রাম থেকে উৎখাত করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের সম্পত্তি দখলে ব্যর্থ হয়ে মোয়াজ্জেম ও তার সহযোগিরা বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।

ভূক্তভোগীরা জানান, হঠাৎ করে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়া এই মোয়াজ্জেম হোসেন গত দুই মাস ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার করে বেরাচ্ছেন।

এমনকি নিজেকে আ’লীগ নেতা হিসেবে জাহির করতে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পোস্টারিং ও ফেস্টুন সাটিয়েছেন। তবে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের অভিযোগ, মোয়াজ্জেম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র ছবি সংবলিত ব্যানার বানিয়ে হাতির পিঠে বেঁধে গণসংযোগের নামে জাতীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন করে চলেছেন। আর এতে মোটা অংকের টাকা পেয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন স্থানীয় সুবিধাবাদী কতিপয় নেতা। তারা আরও জানান, বসন্তের কোকিলের ন্যায় নির্বাচনী মাঠে এসে আপত্তিকর কর্মকান্ডের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন উজিরপুর-বানারীপাড়ার আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। যা মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না খোঁদ দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের একমাত্র অভিভাবকখ্যাত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি।

শিবপুর গ্রামের নিপেন বাড়ৈ জানান, তাদের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাদের দুই একর জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র বানিয়ে তাদের আরও ৭৮ শতক জমির উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে জবরদখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ২০১০ সাল থেকে ভ‚মিদস্যু ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল আমাদের ক্রয় করা ও পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রের ১২ একর সম্পত্তি দখলের পায়তারা শুরু করেছেন। এমনকি জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে মোয়াজ্জেম আমাকে (মাসুম) সহ অন্যান্য ওয়ারিশদের মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। সাতলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর (শিবপুর) ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেনা সদস্য কাঞ্চন হাওলাদার বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন থেকে আমার ভোগ দখলীয় জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার অবৈধ দখলে বাঁধা প্রদান করায় সে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছে।

শিবপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম ও আলেয়া বেগম বলেন, ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমাদের ক্রয়কৃত এবং পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। মিথ্যে মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে এখন আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, পৈত্রিক ও ক্রয় করা তিন একর সম্পত্তি দখলের জন্য ভ‚য়া ডিক্রি করে ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম ইতোমধ্যে আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। পশ্চিম সাতলা গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য ইকবাল বালী জানান, তার ক্রয়কৃত দশ একর ৬৮ শতক সম্পত্তি দখল করার জন্য মোয়াজ্জেম তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এছাড়া তাকে হত্যার জন্য হুমকি অব্যাহত রাখায় তিনি (ইকবাল) এখন ভ‚মিদস্যু মোয়াজ্জেম ও তার বাহিনীর হামলা এবং মামলায় গ্রেফতার আতংকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভূক্তভোগীদের অভিযোগে আরও জানা গেছে- পশ্চিম সাতলা ও শিবপুর এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের সম্পত্তি দখল করার জন্য একের পর এক মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এছাড়াও মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শিবপুরের সীমান্তবর্তী কান্দি এলাকার অসংখ্য পরিবারের সম্পত্তি দখল করে উচ্ছেদ করার অভিযোগ রয়েছে। ভূমিদস্যু ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমের হাত থেকে রেহাই পেতে ভ‚ক্তভোগীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল গোলন্দাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন