১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সাতলায় ‘লাল শাপলা’র হাসি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আরেকটি ঐতিহ্যের নাম লাল শাপলা। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে। উপজেলার সাতলা ইউনিয়নে উত্তর সাতলা ও হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। এরমধ্যে উত্তর সাতলা গ্রামটি ‘শাপলা বিল’ নামেই বেশি পরিচিত।

সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। অতি শীঘ্রই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারনা। বিলের চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব।

আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলের পানিতে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা। এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্র।

ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’। বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা, হারতার কালবিলা, পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বিল। তবে বিলের মোট আয়তন সম্পর্কে জানা নেই স্থানীয়দের কারোরই।

তবে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে প্রায় ১৬ শ’ হেক্টর জমি নিয়ে এ বিল। ঠিক কতো বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় ষাটোর্ধ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রংয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি। বিলের যতো ভেতরে এগুতে যাবেন ততোই লালের আধিক্য।

এক পর্যায়ে মনে হবে শাপলার রাজ্যেবন্দি হয়ে আছেন আপনি। তাছাড়া শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য্য নয় বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিল সংলগ্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার কয়েক শ’ পরিবার।

তারা আরও জানিয়েছেন ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা এখানে ধান চাষ করেন। তবে একই সাথে ধান ও শাপলার এই সহাবস্থান আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে।

এর মধ্যে সাদা, বেগুনী (হুন্দি শাপলা) ও অন্যটি লাল রংয়ের। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি।

সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।”

16 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন