২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

হেরেও তিনি হিরো

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ, ০২ আগস্ট ২০১৮

সদ্যসমাপ্ত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-র ডা. মনীষা চক্রবর্তী। বড় ব্যবধানেই তিনি হেরেছেন।

তবে হেরেও হিরো তিনি। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি একেবারেই তার বিপরীতে একজন মানবদরদী ও সাধারণের অধিকার আদায়ে লড়াকু চরিত্রের কারণে অসংখ্য মানুষের মনিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি।
গত সোমবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে মেয়রপদে জয়ী হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ বাকি ছয় মেয়রপ্রার্থীই সেখানে জামানত হারিয়েছেন। মনীষাসহ একাধিক প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে মাঝপথেই নির্বাচন বর্জন করেন। ভোটকেন্দ্রে লাঞ্ছিতও হন তিনি। এত কিছুর পরও তার প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৯১৭।

মনীষা চক্রবর্তী একজন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসাকে তিনি পেশা নয় সেবা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মনীষা সরকারি চাকরিতে যাননি। বরিশালের বস্তিবাসী খেটে খাওয়া মানুষদের চিকিৎসাসেবায় তিনি নিবেদিত। শ্রমিকসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও তিনি অগ্রগামী। এ জন্য কারাবরণও তাকে করতে হয়েছে। নির্বাচনে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন সেই সব মানুষের ওপর নির্ভর করে। মাটির ব্যাংকে টাকা জমিয়ে সাধারণ মানুষেরা তার নির্বাচনী খরচ জুগিয়েছে।

মনীষা চক্রবর্তী দেশবাসীর নজরে আসেন প্রথম গত এপ্রিল মাসে। ফেসবুকে বরিশাল শহরের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। একজন লড়াকু নারীকে গ্রেপ্তারের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ ঘিরে ধরেছে। আর তার চারপাশে মানবঢাল হয়ে আছে বেশ    কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ। পুলিশ তাদের সমানে পেটাচ্ছে। ঘটনাটি ছিল, বরিশাল শহর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ করা হচ্ছিল। উচ্ছেদ ঠেকাতে রাস্তায় মিছিল বের করেন চালকরা। তাদের রুটিরুজির সংগ্রামে সামনের কাতারে ছিলেন মনীষা। সেবারে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ সোচ্চার হন। সেই মনীষাই যখন মেয়র পদে দাঁড়ালেন তখন তার পক্ষে যে দেশজুড়ে অজস্র মানুষের ভালোবাসা থাকবে সেটা বলাইবাহুল্য।

মনীষা প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে, তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে নিহত হন। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নিজেও সরকারি চাকরির সুবিধা গ্রহণ করেননি। বরং দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বেছে নেন সমাজবাদী রাজনীতি। আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে যেটা বিরল ঘটনা বলা চলে। গরিবের ডাক্তার নামে বরিশালে তাকে সবাই চেনে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে তিনি ‘গরিব মানুষের বন্ধু’। আর তাই তার কাছে যে কোনো সময় যাওয়া যায়। প্রয়োজনে পাশে পাওয়া যায়। তিনি সবার জন্যই কাজ করেন।

স্রোতের বিপরীতে চলা এমন দরদি নেতা যে শুধু বরিশালে নয় সারা দেশের মানুষের মণিকোঠায় ঠাঁই নেবেন সেটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনে তার হেরে যাওয়ার পর প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মনীষা বাসদের পতাকা নিয়ে রাজনীতির মাঠ চষবেন, কিছু মানুষের বাহবা পাবেন কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে পারবেন না। মনীষাকে নিয়ে যারা এখন উচ্ছ্বাস ও আবেগে ভাসছেন তারাও তার রাজনীতির পক্ষে দাঁড়াবেন না। আমরা সৎ মানুষের রাজনীতি চাই আর জেনে-বুঝেও অসৎ মানুষদের ভোট দেই।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন