২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

‘তুফানিয়া’ থেকে ‘জাহাজমারা’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৫০ অপরাহ্ণ, ০৫ এপ্রিল ২০১৮

চারদিকে সমুদ্রের জলরাশি। সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়াদের ছুটোছুটি। শেষ বিকেলে দিগন্ত রেখায় সূর্যাস্তের দৃশ্য। ভোরে কুয়াশার আভা ভেদ করে পুব আকাশের বুক চিরে লাল সূর্য ওঠার মনোরম দৃশ্য। এরই মাঝে সকাল-দুপুর-বিকেল পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা দ্বীপ।

এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ তুফানিয়ার গল্প। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে নয়নাভিরাম এ দ্বীপ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে এ দ্বীপের অবস্থান। আর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এটির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

এ দ্বীপের অন্য প্রান্তে রাঙ্গাবালী উপজেলার বড় বাইশদিয়ায় সমুদ্রপাড়ে রয়েছে আরেকটি সমুদ্র সৈকত, যার নাম জাহাজমারা। পর্যটন মৌসুমে কিছু ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে তুফানিয়া ও জাহাজমারায় যাতায়াত করে। কুয়াকাটা থেকে কিংবা রাঙ্গাবালী থেকে এসব স্থানে ট্রলারে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পর্যটকেরা এসব স্থানে আসেন কিছুটা প্রশান্তির খোঁজে।

অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব স্থানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হতে পারে, আর সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

স্থানীয়রা জানায়, শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে চাইলেও বাইরে থেকে লোকজন আসতে পারেন না। এসব পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনা বিকাশে বিশাল অট্টালিকা বানানোর প্রয়োজন নেই। পর্যটন মৌসুমে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলে আর কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।

তারা বলেন, পর্যটন বিকাশে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সড়ক পথ তৈরি যে বাধ্যতামূলক তা নয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে সরাসরি লঞ্চ যোগাযোগের ব্যবস্থা করলেও পর্যটকরা আসতে পারেন। অন্তত পর্যটন মৌসুমের কথা বিবেচনায় রেখে এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পর্যটন বিকাশের মধ্য দিয়ে এ এলাকার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

দ্বীপের দক্ষিণে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত। এখন পর্যন্ত এখানে লোকবসতি গড়ে ওঠেনি। আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। সরকার এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা না করায় পর্যটকেরা এখানে আসছেন যত্রতত্রভাবে। ধ্বংস করছেন দ্বীপের সৌন্দর্য। পর্যটনকে কেন্দ্র করে দ্বীপের নির্দিষ্ট স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিলে বাঁচবে পরিবেশ।

দ্বীপে রয়েছে সবুজের মনোরম সমারোহ। ৫০০ একর বিস্তীর্ণ বনভূমিতে রয়েছে কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাবলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে এক সবুজ বনভূমি।সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা তুফানিয়া একটি অন্যরকম দ্বীপ। এই দ্বীপের মূল বাসিন্দাই হচ্ছে লাল কাঁকড়া। যাদের উপস্থিতিতে সমুদ্রের রূপালি সৈকত যেন রক্তিম হয়ে ওঠে। জনমানবশূন্য দ্বীপে হঠাৎ করে মানুষের উপস্থিতি ঘটলে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে কাঁকড়াগুলো। দ্রুত আশ্রয় নেয় গর্তে। আবার অনেক কাঁকড়া ব্যস্ত হয়ে নিজেদের লুকানোর চেষ্টা করে বালুর ভেতরে। মানুষের আনাগোনায় দ্বীপে লাল কাঁকড়ারা নিরাপদ নেই। এদের নিরাপদ আবাসভূমি হুমকির মুখে পড়েছে।

বঙ্গোপসাগরের বুকে বিশাল এই দ্বীপ জেগে উঠতে শুরু করে গত শতকের ষাটের দশকে। তখন এই দ্বীপে সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আঁছড়ে পড়তো। সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ এমনভাবে ভেঙে পড়তো, যা দেখলে মনে হতো দ্বীপের ওপরই যেন তুফান বইছে। সেই থেকে জেলেরা এই দ্বীপের নাম দিয়েছেন ‘তুফানিয়া’।

মৌডুবি বাজারের কাছে বেড়িবাঁধের বাইরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে এ এলাকার আরেক সম্ভাবনাময় স্থান জাহাজমারা। সমুদ্রতীরে দীর্ঘ সৈকতের পাশে রয়েছে বন বিভাগের ঘন বনাঞ্চল। সমুদ্রের ঢেউ আর সবুজ প্রকৃতি এ এলাকার পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়।

জাহাজমারার স্থানীয় লোকজন জানান, মৌসুমে অনেক কষ্ট করে এখানে কিছু লোকজন বেড়াতে আসেন। অনেকে আবার আসেন পিকনিক করতে। সড়ক পথে যাতায়াতে সমস্যা বলে এখানে দূরের লোকজন আসেন ট্রলারে করে। সুযোগ করে দিলে এই নির্জনে বহু পর্যটক আসতে পারেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন