২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

কচুরিপানা, আবর্জনায় খালের প্রাণ যায়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪১ অপরাহ্ণ, ০১ আগস্ট ২০১৮

খালের ভেতরে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। এ ছাড়া খালের ভেতরে কচুরিপানা ঠাসা। মাঝেমধ্যে মাটির স্তূপ। অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনার জঞ্জাল। খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাঁচা-পাকা স্থাপনা। এভাবে পানিপ্রবাহের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এককথায় দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে খালটি।

এ চিত্র ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কাটখালী খালের। দক্ষিণে বিষখালী নদী থেকে শুরু হয়ে উত্তরে ভারানী খাল হয়ে সুগন্ধা নদীর সঙ্গে মিশেছে খালটি।

খালপাড়ের বাসিন্দা মো. আনয়ারুজ্জামান বলেন, ৫০ ও ৬০-এর দশকে খর¯্রােতা এ খালকে নদী মনে হতো। নদী ও কয়েকটি শাখা খালের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় নৌপথে পরিবহন অনেক সহজ ছিল। এ কারণে তখন খালপাড়ে গড়ে ওঠে উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের অভিজাত পরিবারগুলোর বসতি। তখন এ খালে একবার সুতিজাল টানলে এক নৌকা মাছ পাওয়া যেত।

মো. নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক বলেন, প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫০-২০০ ফুট প্রস্থের এ খালটি উপজেলার পানিপ্রবাহে হৃৎপি-ের মতো কাজ করছে। এটি দুটি নদী ও চারটি খালের সঙ্গে সংযুক্ত। খালটির উন্নয়ন করে উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের জলাধার হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা জরুরি।

উপজেলার কামদেবপুর গ্রামের কৃষক শাহ জামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খাল খনন না করার কারণে দুপাশে আগাছা জন্মেছে। ফলে পানি সময়মতো নিষ্কাশন হচ্ছে না। যার ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খালটি যথাযথভাবে সংস্কার না করায় দিনে দিনে ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা ও প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বাধা পাচ্ছে। এছাড়া খাল পাড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকরা খালের পাড় কেটে নিচের কিছু অংশ ভরাট করে আবাদি জমি তৈরি করে নিজ দখলে নিচ্ছেন। ফলে খালের আকার সংকুচিত হচ্ছে।

জানা গেছে, খালটি সংস্কার ও ভরাটের হাত থেকে রক্ষার জন্য মোল্লারহাট ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ গত ২০১৩ সালের ১০ মার্চ এলজিইডি’র ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর একটি আবেদন পাঠান। এরপর ২০ জুন নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে আবেদনটি (স্মারক নং-এলজিইডি/নি: প্র:/ ঝাল/ ১৮৭২) প্রস্তাব আকারে এলজিইডির সদরদপ্তরে প্রেরণ করা হলেও তা অধ্যাবধি আলোর মুখ দেখেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালটির পাড় দিয়ে চলাচলের সুযোগ নেই। উভয় পাড় ঘেঁষে এবং কেউ কেউ খালের ভেতরে কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। খালের প্রায় মাঝখান পর্যন্ত মাটির স্তূপ করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। কচুরিপানায় প্রায় পুরো খাল ঠাসা। উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এটি। অনেক বাড়ির শৌচাগার ও নালার সংযোগও দেওয়া হয়েছে এ খালে।

কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এ খাল থেকে দিন দিন দুর্গন্ধ বাড়ছে। বাড়ছে মশা-মাছির উৎপাত। বর্ষাকালে মরা মাছে খাল ভরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে খালটি। তবে খাল পাড় ও খালের ভেতরে কাঁচা-পাকা স্থাপনা গড়ে তোলা কয়েকজনের দাবি, নিজের মালিকানাধীন জমিতেই তারা এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।

খালটি স্থানীয় রাজাবাড়িযা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির লিমিটেড (এসপি নং-২৫৩২০) এর প্রকল্প এলাকার মধ্যে অবস্থিত। এ ব্যাপারে সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চৌহদ্দি জটিলতার কারণে সস্কার বা পুনঃখননের প্রস্তাবটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খালটি সংস্কার ও দূষণ থেকে মুক্ত করতে পারলে লাখ লাখ টাকার মাছ পাওয়া যেত। যা দিয়ে উপজেলার মাছের চাহিদা অনেকটা মেটানো যেত।

এলজিইডির নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ হেল বাকী বলেন, প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে। এ বছরের শেষের দিকে ওই খালের পুনঃখননের কাজ শুরু হতে পারে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন