আকস্মিক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা। চাহিদার চেয়ে তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বরিশালবাসী। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- গরম বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়তে থাকে। চাহিদা বাড়ায় জরাজীর্ণ লাইন ও ট্রানস্ফরমারগুলো লোড নিতে না পারায় একের পর এক বিকল হচ্ছে সরবরাহ লাইন।
গত এক মাস ধরে এ অবস্থা পুরো নগরীজুড়ে। মঙ্গলবার (২ মে) এমনই অবস্থা চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত লোডশেডিং চলেছে অনেক জায়গায়। বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। গরমের তীব্রতায় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। পাশাপাশি পরীক্ষা চলায় এ ভোগান্তি আরও অধিকতরভাবে সৃষ্টি হচ্ছে।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জয়ন্তী রানী মন্ডল বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন, কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স এবং উচ্চ মাধ্যমিক শাখার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা চলছে।
এমন সময় কিছুক্ষণ পর পর আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মামুন বরিশালটাইমসকে জানান, অসহ্য গরমে এরকম বিদ্যুৎ বিভ্রাট আমাদের অনেক সমস্যা করছে। গরমে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবেই এটা সবসময়ই হয়। কিন্তু এ চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা যদি আগে থেকে এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতেন, তাহলে হয়তো এ সমস্যায় আমাদের ভুগতে হতো না।
খোঁজÑখবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সামিট পাওয়ার স্টেশনে দৈনিক উৎপাদিত ১২০ মেগাওয়াট এবং সংলগ্ন গ্যাস টারবাইনে ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই বরিশাল গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। সর্বমোট দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বরিশাল গ্রিড।
সে হিসাবে বরিশাল গ্রিডে বিদ্যুতের কোনো সংকট নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন- দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অভ্যন্তরীণ সরবরাহ লাইনের অবস্থা খুবই নাজুক।
একই অবস্থা ট্রান্সফারগুলোর। নগরীর কাশীপুর ও পলাশপুরে তিন যুগ আগে স্থাপিত দুটি ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন সংস্কার হয়নি। গ্রাহক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি ফিডারেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত লোড সামাল দিতে গিয়ে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ সরবরাহের সামগ্রীগুলো।
বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত থাকলেও গ্রাহক বেরে যাওয়ায় এর লোড নিতে পারছে না লাইনগুলো। এ কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন বরিশালটাইমসকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং সরবরাহ লাইন ও ট্রান্সফরমারগুলো অতিরিক্ত লোড নিতে পারায় জরুরি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।”
শিরোনামবরিশালের খবর