বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় তৎপর নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার অংশ হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের একের পর এক শোকজ ও তলব করা হচ্ছে। লাগাম টানতে মাঠের প্রতিবেদনের আলোকে কোনো কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলাও করছে কমিশন। এরপরও থামানো যাচ্ছে না অনেক প্রার্থীকে। বেপরোয়া এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরও হার্ডলাইনে যাচ্ছে ইসি। সেক্ষেত্রে এবার প্রথম বারের মতো প্রার্থীদের বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করতে আমরা বাধ্য হব।’
ইসিসূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সহিংস হয়ে উঠেছে ভোটের পরিবেশ। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুই জন নিহত ও বহু সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন পর্যন্ত সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এমন প্রেক্ষাপটে কমিশনের করণীয় নিয়ে গতকাল শনিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে তিন জন কমিশনারের উপস্থিতিতে অনির্ধারিত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান এতে অংশ নেন। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কমিশনার রাশেদা বেগম ঢাকার বাইরে রয়েছেন। বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ তালিকায় রয়েছেন বরগুনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূ, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার, ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি আব্দুল হাই ও মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপসহ আরও কয়েকজন। মাঠের আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরই তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে কমিশন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২১৫ জন প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে। কারণ দর্শানোর জন্য তলব করা হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকে। এর মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং প্রার্থীদের অনুসারীরাও রয়েছেন।
দুই থানার ওসি প্রত্যাহার, আরও ৭৯ ওসি বদলির প্রস্তাব: নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা ও হরিনাকুন্ডু থানার ওসিকে প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি জানিয়েছে, ভোটের প্রচারণাকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে পালটাপালটি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ দুই থানার ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৭৯ ওসিকে বদলির জন্য নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ডিসি ও এসপির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে আরও ৭৯ পুলিশ পরিদর্শকের (ওসি) বদলির অনুমতি চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পুলিশ অধিদপ্তরের ৩০ পরিদর্শক (সশস্ত্র), ৪৬ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এবং শহর ও যানবাহন শাখার তিন পরিদর্শককে বদলি কিংবা পদায়নের সম্মতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৩৩৮ থানার ওসি ও ২০১ জন ইউএনওকে বদলির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন।
ভোটবিরোধী লিফলেট বিতরণ করলে ব্যবস্থা—ইসি আনিছুর: ভোটবিরোধী লিফলেট বিতরণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘কেউ ভোটে না-ও আসতে পারেন, ভোট দিতে না-ও পারেন কিন্তু ভোট প্রতিহত করার অধিকার কারও নেই। আমরা এবার সংশোধনী এনেছি। সেক্ষেত্রে অন্যকে প্রতিহত করলে সাত বছর পর্যন্ত জেল বা অর্থদণ্ড করার বিধান রয়েছে। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট সবাইকে বলেছি যে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কোনো কার্পণ্য যাতে না হয়।’ গতকাল শনিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।