বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৩ অপরাহ্ণ, ১২ অক্টোবর ২০২৪
কুয়াকাটা প্রতিনিধি।। সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য আজ মধ্যে রাত থেকে শুরু ২২দিনের অবরোধ। চলবে ০৩ নভেম্বর পর্যন্ত । এ সময় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতিমধ্যে পোষ্টারিং,ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেছে এমনটা জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩শত ৫ জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্ধ সরকার প্রদত্ত ২৫ কেজি চাল ইতিমধ্যে ইউনিয়নে ও পৌরসভায় পৌঁছে গেছে। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বন্টন করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সঙ্কটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা।
অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের উপক্রম এখানকার জেলেদের।
দীর্ঘদিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে। তা নামে মাত্র প্রহসন ছাড়া কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
জেলে আব্দুস সোবহান ঘরামী বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর লোন টাহার ঋণ লইয়া মানষিক দুশ্চিন্তায় মোর চোঁহে ঘুমে ধরে না।
আর মহাজনের দাদনের টাহা কেমনে পরিশোধ করমু। এহন হতাশ অইয়া গেছি। ২২দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল যা দিয়া এই কয়দিন সংসার চলে?
মাঝি ইউনুস পহলান বলেন, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারি নি। আবার ২২ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে।
অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায় না প্রশাসনের।
তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। তারা আরও দাবি করে বলেন, সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবার সহ ভারতের সময়সীমার সাথে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেয়া হয়।
বাবা-মায়ের দোয়া ফিস পান্না হাওলাদার জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।
ট্রলারের মালিক খলিল খান জানান, জমি জমা বিক্রি করে একটি ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি।
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপসাহা বলেন, অবরোধ চলাকালীন সময় দু-এক জন জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবনতা থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সাথে মিটিং করেছি তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
নদনদী ও সমুদ্রে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।