বরিশাল আদালতের একটি নির্দেশ বাস্তবায়ন নিয়ে পুলিশের বহু নাটকীয়তা দেখতে হয়েছে। কিন্তু শেষাবধি সেই নির্দেশনার পালন না করেই কৌশলী পথে হেটেছে পুলিশ। বিবাদী এলাকায় বহাল তবিয়তে থাকলেও আদালতের প্রেরিত সমন জারির নোটিশ পৌছায় নি পুলিশ। এই গুরুতর অভিযোগ বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানা পুুলিশের বিরুদ্ধে। বিবাদী স্থানীয় উপজেলা আ’লীগ সভাপতি চরকাউয়া ০৭ নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবিকে দীর্ঘ ০১ মাসেও খুঁজে না পাওয়ার এই বিষয়টি অনেককেই অবাক করেছে।
বিশেষ করে এই ঘটনায় বন্দর থানা পুলিশের ওসি ও সমন পৌছে দেয়ার দায়িত্বে নিয়েজিত পুলিশ কর্মকর্তা বেল্লালের ভূমিকায় প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ০১ মাসেও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন পুলিশ না করতে পারায় এই বিষয়টিকে দায়িত্ব অবহেলার দৃষ্টিতে দেখছে কেউ কেউ। যদিও এএসআই বেল্লাল বলছেন, এটি দোষের কিছু নয়। খোঁজাখুঁজির পরে ছবি চেয়ারম্যানকে না পেয়ে বাধ্য হয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মেহেদি হাসান নামে এক সাংবাদিককে হত্যাহুমকি দেয়ার অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরি হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায়।
ওই ডায়েরি তদন্ত শেষে ছবি চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ নভেম্বর মনিরুল ইসলাম ছবির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। সেই সমন জারির নোটিশটি এক দিন বাদে অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট বন্দর থানায় গিয়ে পৌছায়। সেখানকার ওসি ওই নোটিশ পৌছানের দায়িত্ব দেন এএসআই বেল্লালের ওপরে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তা নাকি এক মাসেও খুঁজে পাননি বাদিকে এমননি একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি আদালতে দিয়েছেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, নোটিশ পাওয়ার পর ১১ ডিসেম্বর ছবির বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি ঢাকায় রয়েছেন। যে কারনে আদালতে এমনই প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। অথচ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পুরো ডিসেম্বর মাস এলাকায় ছবি ছিলেন, করেছেন জনপ্রতিনিধিত্ব।
এমনকি ইউনিয়ন পরিষদেও প্রতিদিনের ন্যায় উপস্থিত ছিলেন। তাহলে পুলিশ কর্মকর্তা কেন তাকে খুঁজে পেলেন না বা না পাওয়ার হেতু কি এমন প্রশ্ন বরাবরই সামনে আসছে। এমতাবস্থায় খোঁজ-খবর নিয়েও ডায়েরির বাদী মেহেদি হাসানের সাথে আলাপ করে করে জানা গেছে, পুরো প্রতিবেদনটি এএসআই বেল্লাল আদালতে ভুল তুলে ধরেছে।
মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বাদীকে নিখোঁজের তালিকায় রেখেছেন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছবি ডিসেম্বর মাসে বেশিরভাগ দিনই অফিস করেছেন। কিন্তু তারপরেও এএসআই বেল্লাল আদালতে নির্দেশ পালনে কোন গুরুত্ব দেননি। বরং তিনি ছবি চেয়ারম্যানের সাথে সমঝোতায় গিয়েছেন। যে কারণে ০২ জানুয়ারি ছবির আদালতের থাকার কথা থাকলেও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ছিলেন বাইরে। যদিও এই সমনটি আদালত আবারও পুলিশকে ১৫ দিনের মধ্যে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এবার পুলিশ কর্মকর্তা বেল্লালের দাবি ছোটখাট বিষয় হওয়ায় বিবাদীকে খুঁজতে তিনি যাননি, পাঠিয়েছিলেন একজন থানার একজন কনষ্টেবলকে। এক মাসেও কি খুঁজে পাওয়া গেল না – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন বিষয়টি সেভাবে দেখা হয়নি। অথচ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এএসআই বেল্লাল ও ছবি চেয়ারম্যানকে পাশাপাশি দেখেছে, তাদের আলাপ হয়েছে মুঠোফোনে একাধিকবার। কিন্তু এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে অনাগ্রহ কেন এমন প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলে তিনি বলেন পরবর্তীতে আদেশটি আসলে বাস্তবায়ন করা হবে।
সেই সাথে তিনি ছবি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এই বিষয়ে বন্দর থানার ওসি বলছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে জানাবেন। বৃহস্পতিবার সকালে এই কথা বললেও গভীর রাত পর্যন্ত তিনি কিছুই জানালেন না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ওসিও কি আদালতের আদেশ পালনে গড়িমসি করবেন (?)
শিরোনামখবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর